সিরিয়ায় জাতিগত সংঘাত তীব্রতর; ইসরাইলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্বীকৃতি

দ্রুজ-বেদুইন সংঘাত
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

যুদ্ধবিরতি ভেঙে সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখছে বেদুইনরা। বিপরীতে দ্রুজদের রক্ষায় আবারও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবি, সিরিয়ায় ইসরাইলের হামলাকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। সপ্তাহব্যাপী জাতিগত সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬০০ মানুষ।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে আহমেদ আল শারা সরকার। এতে সুয়েইদায় জাতিগত সংঘাত নিরসনের কথা থাকলেও হয়েছে উল্টো। কারণ সিরীয় সেনাদের বদলে দ্রুজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখছে বেদুইন গোষ্ঠী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এক বেদুইন কমান্ডার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে সিরীয় সরকার। আহমেদ আল শারা প্রশাসন সেনা প্রত্যাহার করলেও এটি বেদুইনদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই দ্রুজদের হাতে অপহৃত যোদ্ধাদের ফিরিয়ে আনতে লড়াই অব্যাহত রাখছে বেদুইনরা। সুয়েইদার পাশাপাশি দেরা ও ইদলিব অঞ্চলেও ঘাঁটি গেড়েছে আরবের এই সম্প্রদায়।

বেদুইন কমান্ডারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা সুয়েইদা আবারও দখল করবো। দ্রুজদের হাতে আমাদের ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নিবো।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমাদের নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। তাই প্রতিশোধ নিতে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি।’

এদিকে দ্রুজদের পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দিতে নিয়মিতই সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে ইসরাইলি দ্রুজরা। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে ছাড়ছেন সিরিয়া। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বহরের সিরিয়ায় অনুপ্রবেশের তথ্যও মিলেছে।

ইসরাইলি দ্রুজদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। সীমান্ত খুলে দেয়ায় দুই ভাগ্নে ইসরাইলে প্রবেশ করেছে। তবে বোন মারা গেছে।’

অন্য একজন বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে সিরিয়ায় অবস্থান করা আমার পরিবারের অপেক্ষায় আছি। জানি না এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে।’

সানা নিউজ এজেন্সির তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে সিরিয়ায় আবারও হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবি, সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলার সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। উত্তেজনা প্রশমনে দুই প্রতিবেশীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখছে ওয়াশিংটন। তবে বল প্রয়োগের মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করার কৌশল অব্যাহত রাখার ঘোষণা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান দুটি লক্ষ্য হলো সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে বেসামরিকীকরণ করা ও দ্রুজদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যুদ্ধবিরতি পেয়েছি বল প্রয়োগের মাধ্যমে। শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবো।’

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলাকে সমর্থন করছে না। আমরা সিরিয়া ও ইসরাইলের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি। দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উৎকর্ষ মধ্যপ্রাচ্য গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।’

তুরস্ক সিরিয়াকে বিভক্ত হতে দিবে না বলে মন্তব্য করেছেন রিসেপ তাইপ এরদোয়ান। দেশটির প্রেসিডেন্টের দাবি, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল শান্তি চায় না। তবে এই স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়া হবে না। অন্যদিকে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। এটি করা না হলে উত্তেজনা আরও বাড়বে।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান বলেন, ‘সিরিয়াকে বিভক্তের পরিকল্পনাকে আমরা কখনোই সমর্থন দেইনি। আগামীতেও দিবো না। ইসরাইল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরাইলের আগ্রাসন এই অঞ্চলের জন্য বড় সমস্যা। তবে তাদের স্বপ্ন পূরণ হতে দিবে না তুরস্ক।’

এদিকে সুয়েইদার সাধারণ জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ করেছে সিরিয়ার কামিশলি শহরের কুর্দি জনগোষ্ঠী। সংঘাত নিরসনে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দাবি, জাতিগত সংঘাতে ১৪ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬০০ মানুষ।

এসএস