ধান কাটার মৌসুম যেন হাওরাঞ্চলের কৃষকের কাছে উৎসব। এ সময় রাজ্যের ব্যস্ততায় দিন কাটে কৃষকের। প্রখর রোদ, গরমের তীব্রতা উপেক্ষা করে চলে ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা।
নেত্রকোণা গোবিন্দশ্রী হাওরের কৃষক সেলিম মিয়া। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় দেড়শো মণ ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে খোরাকির ৩০ মণ রেখে বাকিটা বিক্রি করেছেন। সেলিম মিয়ার মতো হাওরের প্রায় সব কৃষকেরই একই দশা।
দেনা পরিশোধের চাপ; পাশাপাশি সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় ধান বিক্রি করেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। আর এই সুযোগে ধানের দাম কমিয়ে দেয় মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ ধানের দাম ১২শ' টাকা থাকলেও মাঝামাঝি সময় এসে ঠেকে ৮শ থেকে সাড়ে ৮শ টাকা।
ধান মাড়াই ও শুকানোর জায়গার অভাব, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্ভোগ হাওরের কৃষকের নিত্যসঙ্গী। ধান কেটে খলায় আনতে গুনতে হয় বাড়তি খরচ। সরকার ধান-চাল সংগ্রহের জন্য দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা জুটেনা হাওরের কৃষকের ভাগ্যে।
ধান পাকা শুরু হলেই হাওরে বেড়ে যায় ধান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের আনাগোনা। ধান কিনে ময়মনসিংহ, শেরপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠায় তারা।
একজন জানান, প্রতিদিন পাঁচ ছয়টা ট্রাক হয় ২০০ বা ২২০ বস্তা করে ১ হাজার বস্তা ধান হয়।
আগাম জাতের নতুন নতুন ধান আবাদ করলে ভালো দাম পাওয়া সম্ভব- বলছে কৃষি বিভাগ। তবে হাওরের কৃষকের কথা মাথায় রেখেই নেত্রকোনায় আগে ভাগেই শুরু হয়েছে ধান সংগ্রহ।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সালমা আক্তার বলেন, ‘আধুনিক যে জাতগুলো আছে সেগুলো চাষ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেই। এবছর বৃ ধান ৮৮ বৃ ধান ৮৯ এবং বৃ ধান ১০০ এ জাতগুলোই হাওরে চাষ হয়েছে। এখান থেকে কৃষকরা বৃ ধান ৮৮ এর ভালো ফলন পাচ্ছে।’
ফোনকলে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নাঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, ‘অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক সময় কৃষকরা ধানের সঠিক মূল্য পান না। এজন্য সরকার কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরা যেন সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করে ন্যায্য দাম পায় সেজন্য আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’
কৃষি গবেষকরা বলছেন, কৃষক বাঁচাতে হাওরের বিপণন ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যা কমানো এবং হাওরকে কেন্দ্র করেই নিতে হবে সমন্বিত কৃষি পরিকল্পনা।
বাকৃবির হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারের কৃষি সংক্রান্ত যেসব গ্রুপ আছে যেমন বিএডিসি, বারি এসমস্ত অর্গানগুলোকে আপনার কাজে লাগাতে হবে। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের যত দ্রুত কমানো যায়।’
চলতি বছর নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি উপজেলার ছোট বড় মিলিয়ে ১৩৫টি হাওরে ৪১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে প্রায় ২ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের।