আগাম বন্যা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা কাটিয়ে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে এবারের ফসল। হাওর থেকে সমতল সব জায়গায় কৃষকের পরিশ্রমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জেলার মদন মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরীসহ হাওরে আগেভাগেই ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। ব্রি ধান-৮৮, ২৯ এবং হাইব্রিড জাতের ধান চাষে রোগবালাই কম হওয়ায় গড়ে ১০ শতাংশ জমি থেকে মিলেছে ৮ থেকে ১০ মণ ধান, যা অনেকে মাঠ থেকেই কেটে বিক্রি করেছেন পাইকারদের কাছে।
কৃষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এ বছরেও ব্রি ধান-৮৮, ২৯ এবং ৮৯ খুব ভালো ফলন হয়েছে।’
নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনসহ শ্রমিকরা ধান সংগ্রহ করায় চলতি মৌসুমে হাওরে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধরনের আবাদ হয়েছে, যার বাজার মূল্য ১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এ দিকে স্থানীয় বাজারের চিত্র ভিন্ন। ধানের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার দুর্গাপুরসহ প্রতি বাজারে মোটা ধানের চাহিদা রয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে ধানের চাহিদা থাকায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরাই এখন কিনছেন মোটা ধান। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চিকন ধানের বাজার একেবারে নিম্নমুখী।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বাজারে বেচাকেনা হয় না। না মোটা, না চিকন-এগুলো নিয়ে মানুষ দ্বিধায় আছে।’
মো. শহীদ মিয়া চলতি বছরে ২০ কাঠা জমিতে ধান চাষ করে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে ধান ফেরত নিয়েছেন তিনি। খরচ উঠলেও মুনাফা মিলছে না বলে হতাশ তার মতো অনেক কৃষক।
মো. শহীদ মিয়া বলেন, ‘মোটামুটি ফলন ভালো হয়েছে। তবে এবার অনেক ধান নষ্ট হয়েছে।’
এরই মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে, এ ছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ও উৎপাদনে মিলেছে নজরকাড়া সাফল্য বলে জানান কৃষি বিভাগ।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর এখানে ধানের রোগ বা পোকার আক্রমণ তেমন ছিল না। সেজন্য এবারের ফলনও ভালো ছিল।’
এবারের মৌসুমে জেলা জুড়ে বোরো ধানের চাষ হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩০০ কোটি টাকার বেশি ফসল উৎপাদনের সাফল্যে আনন্দিত কৃষকরা।