মেঘে ভাসা পাহাড়ি স্বর্গে খুলছে সীমান্তপথ

বান্দরবান
ফিচার , ভ্রমণ
এখন জনপদে
0

তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম সীমান্ত এলাকা, এখনও অদেখা এক বাংলাদেশ। যেখানে মেঘের ভেলায় পাহাড় ভাসে। সবুজ প্রকৃতি, বুনো হাওয়া, ঝর্ণাধারা আর পাহাড়ি জীবন মিলে তৈরি হয়েছে এক টুকরো স্বর্গভূমি। বলা যায় শিলং, দার্জিলিং বা কাশ্মীরের প্রতিচ্ছবি। যদিও কয়েক হাজার ফুট উচ্চতায় এ সৌন্দর্য এখনও অধরা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে। তবে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক শিগগিরেই খুলে দিচ্ছে সে পথের দুয়ার।

সারি সারি সবুজ পাহাড়ের ঢেউ, মাঝে আঁকাবাঁকা দীর্ঘ সীমান্ত সড়ক। পিচ ঢালা পথ যেন সবুজ ক্যানভাসে শিল্পীর টানা দাগ। সবুজ প্রকৃতি, বুনো হাওয়া, পাখির কলকাকলি। জুম চাষের দৃশ্য তৈরি করেছে অবিকল এক সুইজারল্যান্ড নয়তো কাশ্মীর! তিন পার্বত্য জেলার এসব দুর্গম সীমান্তে এখনও পৌঁছেনি কোন পর্যটক।

প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচুতে মেঘে ঢাকা পাহাড়ি সকাল। যেন আকাশ নেমেছে জল হয়ে। নিঃশব্দে মেঘ ধোঁয়ার মতো ছুঁয়ে যাচ্ছে গাছের ডালপালা। বান্দরবান মিয়ানমার সীমান্তে ভোরবেলার এ দৃশ্য কোনো স্বপ্ন রাজ্যের!

বর্ষায় মেঘ নামে দলবেঁধে। পাহাড়ি পথের প্রতিটি বাঁকে তখন রহস্য। বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি সীমান্তে সৌন্দর্যের ভাষা শুধু চোখে দেখার নয়, হৃদয়ে রাখার।

পর্যটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এরকম পরিবেশ, এরকম উপরে কোথাও দেখিনি। এটা বাংলাদেশের কোনো একটা নতুন জায়গা আবিষ্কার করলাম এখানে এসে।’

এই দুর্গম পার্বত্য জনপদে তৈরি হয়েছে ৩১৭ কিলোমিটার নতুন সীমান্ত সড়ক। যে সড়ক শুধু এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে পৌঁছায় না, পৌঁছে দেয় এক অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দিগন্তে।

৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামসুল আলম বলেন, ‘এক হাজার কিলোমিটার পথ যখন সম্পন্ন হবে তখন হাজারো পয়েন্টে এখানে পর্যটন আকর্ষণের শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এদেশের বহু মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা এখানে রয়েছে।’

কোথাও কোথাও আপনাকে থামতে হবে অপরূপ ঝর্ণার শব্দে। পাথরের বুক চিরে নেমে আসা এসব ঝর্ণা এখানকার মানুষের বেঁচে থাকার উৎস। ঝর্ণার গা ঘেঁষে গড়ে উঠে পাড়া, হয় চাষাবাদ।

পানি মিলে মিশে তৈরি করে বিশাল নদী। জলরাশিতে পড়ে পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি—তৈরি হয় এক জল-আয়নার মায়াবী ছবি।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এলাকাবাসীর জন্য হোক বা পর্যটকদের জন্য হোক, এটার নিরাপত্তা দিতে হলে কঠিনভাবে অ্যাকশন নিতে হবে।’

পর্যটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা আর নিরাপত্তা খুবই জরুরি এখানে।’

পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা আর নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আন্তর্জাতিক পর্যটনের আকর্ষণীয় কেন্দ্র হবে এ পাহাড়ি ভূমি। সীমান্ত পথে থাকবে সাইক্লিং, বাইক রাইড কিংবা ট্রেকিং—অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্যও অবারিত সুযোগ। সরকারের অনুমোদন পেলে খুব শিগগরিই এ দুর্গম সীমান্ত সড়ক পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী।

১৭ ইসিবির অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল নুর মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘নিঃসন্দেহে পর্যটনের জন্য একটা বড় সম্ভাবনা। কারণ এটা হচ্ছে প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রকৃতি দেখার জন্য বিদেশে যাই। আমরা যাবো না, ইনশাআল্লাহ। ভবিষ্যতে আমরা আমাদের এই দেশেই ওইরকম অবকাঠামো করে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করবো।’

প্রায় এক হাজার ৩৬ কিলোমিটারের এ সীমান্ত সড়ক ধরে ভারত ও মিয়ানমারের গা ঘেঁষে যুক্ত করেছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি,বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলাকে।

এসএস