হুমায়ূন আহমেদ, ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জে নানা বাড়িতে জন্ম তার। হুমায়ুন আহমেদের পরিবারে ছিল সাহিত্যমনস্ক আবহাওয়া। বাবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান আহমদ ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। বাবার চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্নস্থানে অবস্থান করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। সেই সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন।
৭০ এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় নন্দিত নরকে উপন্যাস লেখা শুরু করেন এই শব্দের জাদুকর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি তখন প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু। ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই খ্যাতি লাভ করেন তিনি।
১৯৭৩ সালে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেসময় তার বেতন ছিল ৬৫০ টাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থান তিনি তার প্রথম ছোটগল্প রচনা করেন। যা বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরের বছরই অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে লেখালেখির স্বার্থে ছেড়ে দেন অধ্যাপনা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখকদের মধ্যে অন্যতম হুমায়ূন আহমেদ। কলমের আঁচড়ে তিনি যে গল্পজগৎ তৈরি করেছেন, তা আজও সবার কাছে বিস্ময়কর। তার লেখা তিন শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যেগুলো সমাদৃত হয়েছে দেশ-বিদেশের পাঠকের কাছে। হিমু, মিসির আলীর মতো চরিত্র দিয়ে লাখো কোটি পাঠক-ভক্ত তৈরি করেছেন এই কথার জাদুকর। অসংখ্য লেখনীর মাঝেও রয়ে গেছে কিছু অসমাপ্ত কাজ। যা সমাপ্ত হবার নয় কখনোই।
বিনোদন জগতেও কালজয়ী হয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। অনবদ্য সব নির্মাণ ও রচনাশৈলী তাকে অমর করে রেখেছে নাট্য এবং চলচ্চিত্র জগতে। তার লেখনীর ছোঁয়া লেগেছে গানেও। বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক পেয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
তার কল্পনার জগতের বহি:প্রকাশ ঘটেছে নুহাশপল্লীতে। তিনি যেমন পরিবেশে থাকতে চাইতেন, প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে চাইতেন কিংবা লেখনিতে যেমন আবহ ফুটিয়ে তুলতেন তার অনেক কিছুরই দেখা মেলে এখানে।
জোছনা রাত ছিল তার খুব প্রিয়। বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনাগুলোকে নিজস্ব ভঙ্গিতে তিনি যেভাবে অসাধারণ করে তুলেছেন, তা লেখনিতে মুগ্ধতা ছড়ায় ভক্তদের মাঝে। নির্মাণে যে নিজস্ব আলো তিনি জ্বালিয়েছেন, তা জোছনা রাতের মতই চির অম্লান। তার প্রিয় ঋতু ছিল বরষা। তাই গল্প-উপন্যাস থেকে নাটক, সিনেমা কিংবা গানে নানাভাবে করেছেন বৃষ্টিবন্দনা। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই প্রিয় ঋতুতেই পাড়ি জমানো অচেনা ঠিকানায়। এত শত লেখনির মাঝে ভক্তরা কখনোই পাবে না সেই ঠিকানার খোঁজ।