ইলেকট্রিক-ইলেকট্রনিক্স পণ্যে নতুন সম্ভাবনা, ৬৫ দেশে রপ্তানি

আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

দেশের রপ্তানি ঝুড়িতে নতুন সম্ভাবনা ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য। গত অর্থবছরেই রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি হয়েছে বিশ্বের ৬৫টি দেশে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডে জাপানি মালিকানাধীন ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অপ সিড বিডি লিমিটেড। ১৯৯৭ সালে উৎপাদনে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানিতে দীর্ঘ ২ দশকের বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।

কারখানায় রয়েছে অসংখ্য মেশিন। অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় প্রতিটি মেশিনে নানা ধরণের ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি হয়।

কোনটিতে কম্পিউটার ও ল্যাপটপের মাদারবোর্ড বা সার্কিট, কোনটিতে এলইডি লাইটের ক্ষুদ্র সার্কিট আবার কোনটিতে ভেন্ডর মেশিনের যন্ত্রাংশ। হাতের স্পর্শ ছাড়াই এক একটি মেশিন পার হয়ে ধাপে ধাপে তৈরি হচ্ছে পণ্য।

আধুনিক মেশিনে মান নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষা আর দক্ষ কর্মীদের যাচাই বাছাই করার পর এসব পণ্য প্যাকেট করা হয়। এসব পণ্য জাপান, আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যায়।

কারখানার আরেকটি অংশে গিয়ে দেখা যায় একসাথে শত শত শ্রমিক কাজ করছে। মোবাইল ও ল্যাপটপের চার্জার, এডাপটার তৈরি হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান চাহিদা বাড়ায় কারখানায় নতুন নতুন পণ্যের সংযোজন হচ্ছে।

|undefined

চট্টগ্রাম ইপিজেডের এ কারখানার ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা বিশ্ববাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০২০ সালে কারখানা থেকে ১৮০ কোটি টাকার ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি হয়। ২০২১ সালে তা ১৯৯ কোটি টাকায় বেড়ে দাঁড়ায়। আর ২০২২ সালে বিক্রি ২৯৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

অপ সিড বিডির ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন বলেন, 'এডাপটার যেমন আমরা ল্যাপটপে ব্যবহার করি। চার্জার এবং রাউটার ব্যবহারও করি। এগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।'

অপ সিড বিডির জেনারেল ম্যানেজার বনফুল বড়ুয়া বলেন, 'সম্পূর্ণ রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ আমরা জাপানে করি। ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ রপ্তানি আমরা ইউরোপ এবং আমেরিকাতে করি। এখন আবার স্থানীয়ভাবেও রপ্তানি করছি।'

গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিসটা'র তথ্য বলছে ২০২৪ সালে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ১০৪৬ বিলিয়ন ডলারের। যা প্রতি বছর ২.৯৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ৪৮৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার হবে মোবাইল ও টেলিফোন যন্ত্রাংশের। এ বিশাল বাজারে ২১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করে চীন শীর্ষে আছে। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ২০২৪ সালে গড়ে ১.১ টি প্রযুক্তি পণ্য কিনবে। মোট বিক্রির ৩৩ শতাংশ হবে অনলাইনে।

|undefined

সম্ভাবনাময় বাজারে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করে ১০৯৯ কোটি টাকার পণ্য। আর ২০২২- ২৩ অর্থবছরে রপ্তানি ২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১, ৪৬৬ কোটি টাকায়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ৬৫ টি দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি করছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন চীন ও জাপানে শ্রমিক মজুরি বাড়ায় বাংলাদেশে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী এসব দেশ। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আগামীতে রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব।

বনফুল বড়ুয়া আরও বলেন, 'বেশিরভাগ জাপানি কোম্পানি বিভিন্ন দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ হচ্ছে ব্যবসা বান্ধব দেশ। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে এটা বাংলাদেশে আরও বৃদ্ধি পাবে।'

তবে বিশ্ববাজারে দাপটের সঙ্গে থাকতে হলে দক্ষ শ্রমিক দরকার। যেটির সংকট বাংলাদেশে। যা বর্তমানে এ খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

|undefined

অপ সিড বিডি লিমিটেডের ডেপুটি শিফট ইনচার্জ অভয় চৌধুরী বলেন, 'ইলেকট্রনিক্স খাত কয়েক বছর ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার দিক থেকে এই বিষয়ের উপর পড়াশোনাটা একটু কম। দেশের বেশিরভাগ কোম্পানি এখন ইলেকট্রনিক্স নির্ভর। আমাদের অনেকগুলো কোম্পানি এটা নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষাখাতে ইলেকট্রনিক্সকে জোর দিলে পরবর্তী প্রজন্ম উপকৃত হবে।'

এছাড়া প্রযুক্তি খাতে পণ্য বৈচিত্রতা এবং বিনিয়োগ টানতে হয়রানিমুক্ত , ব্যবসাবান্ধব নীতি নির্ধারণ জরুরি বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।