বাণিজ্য চুক্তির দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত; শুল্ক নিয়ে উত্তপ্ত বিশ্ব অর্থনীতি

ডোনাল্ড ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির দ্বারপ্রান্তে আছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করে জাপানের সঙ্গে আলোচনা পথও বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ক্ষেত্রে নমনীয়তার আভাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইন্দোনেশিয়াও আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়। শুল্কের হুমকিতে কানাডার দিকে ঝুঁকছে মেক্সিকোর বাণিজ্য। এদিকে জার্মানি বলছে শুল্কের কারণে মার্কিন অর্থনীতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতিতে নড়েচড়ে বসেছে গোটা বিশ্ব। এবার ট্রাম্পের লক্ষ্য ১৫০টির মতো অপেক্ষাকৃত ছোট বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ। যাদের ওপর বসতে পারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক। শিগগিরই এসব দেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের আলোচনার সুযোগও রাখছে না ট্রাম্প প্রশাসন।

চুক্তির বিষয়ে আরও বেশ কয়েকটি দেশকে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সেসব দেশকে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। ট্রাম্প জানান, বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চমৎকার কিছু চুক্তি হতে যাচ্ছে শিগগিরই।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির খুব কাছাকাছি আছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে এখনও দর কষাকষি চলছে। যদিও চুক্তির বিস্তারিত কিছুই জানায়নি হোয়াইট হাউজ। তবে ট্রাম্প বলছেন, চিঠি পাঠানোর মাধ্যমেই ভারতের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির দ্বারপ্রান্তে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে কবে সেটা চূড়ান্ত হবে এখনও নিশ্চিত নয়। তাদের চিঠি পাঠানোর মাধ্যমেই চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তাদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে দরকষাকষি চলছে।’

বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে আরও এক দফা আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছে ভারতের একটি প্রতিনিধিদল। কৃষিজাত পণ্যসহ ভারতীয় বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশের বিষয়ে দরকষাকষি হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিময়ে শুল্ক হার ২০ শতাংশের নীচে নামাতে পারলেই তা নয়াদিল্লির সফলতা অর্জন হবে।

জাপানের কৃষি পণ্য ও গাড়ি শিল্প নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যেই তাদের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিক্রিয়ায় টোকিও জানায়, দেশের স্বার্থ রক্ষায় কোনো ছাড় দেবে না জাপান। এরপরই শুল্ক নিয়ে স্থগিত হয়ে পড়ে দুই দেশের আলোচনা। এবার ট্রাম্প জানিয়েছে চিঠিতে উল্লেখ করা ২৫ শতাংশ শুল্কই জাপানকে দিতে হবে। শুল্ক নিয়ে জাপান টালবাহানা করছে বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প।

চীনের ব্যাপারে কিছুটা নরম সুর দেখা যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার দাবি, ফেন্টানিল মাদক উৎপাদন ও সরবরাহে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করতে যাচ্ছে চীন। তার আশা, ভয়ঙ্কর এই মাদক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে বেইজিং।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু ফেন্টানিল মাদকের কারণে তাদের ওপর শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। তবে আমি এটিকে জরিমানা হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চাই। তারা ভয়ঙ্কর এই মাদক মেক্সিকোতে সরবরাহের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করাচ্ছে। এখন এ বিষয়ে চীন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।’

এদিকে ট্রাম্প ১৯ শতাংশ শুল্কে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সম্পন্নের দাবি করলেও, আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশটি। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করা বেশ কঠিন। দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বোঝাপড়া বাকি আছে। ১ আগস্টের আগেই তা আলোচনা করে ঠিক করতে আগ্রহী ইন্দোনেশিয়া।

এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে যাচ্ছে প্রতিবেশি দেশ মেক্সিকো। ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ শুল্ক হুমকিতে কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য জোরদার করতে যাচ্ছে দেশটি। এ বিষয়ে এরইমধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও জানান মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেনবাউম।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্কের বিষয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছে মেক্সিকো। কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য জোরদারের পরিকল্পনা করছে মেক্সিকো। কৌশলগতভাবে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

জার্মান অর্থমন্ত্রীর মতে, ট্রাম্পের শুল্কারোপে ইউরোপের মতো মার্কিন অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৩০ শতাংশ শুল্কারোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি।

জার্মানির অর্থমন্ত্রী লার্স ক্লিংবেইল বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইউরোপের কোম্পানিগুলোর মতো মার্কিন অর্থনীতিও হুমকির মুখে। এজন্য এই শুল্ক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে হবে। এ বিষয়ে ইউরোপের সব দেশ একমত। ট্রাম্পের হুমকি কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না।’

তবে ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের বিষয়ে অনড় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের অভিযোগ, দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সঙ্গে যা করছে তা লজ্জাজনক। এদিকে একটি সমঝোতায় আসতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ব্রাজিল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ থেকে ৫০ শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছে। তাদের মতে, এতে করে দুই দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এসএস