বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকবে: শুল্ক ইস্যুতে বাণিজ্য উপদেষ্টা

শেখ বশিরউদ্দীন
দেশে এখন , আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

অবশেষে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করলো যুক্তরাষ্ট্র। এতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকবে বাংলাদেশ এবং রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আর স্বাগত জানিয়ে একে কূটনৈতিক বিজয় বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কয়েক দফার আলোচনার পর শুল্ক হার ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। যা কার্যকর হবে এক সপ্তাহের মধ্যেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদার দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে শুল্ককে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম অবস্থায় প্রায় দেড় শতাধিক দেশের ওপর উচ্চহারে শুল্ক ধার্য করে ওয়াশিংটন। পরে তিন মাসের জন্য তা স্থগিত করে বাণিজ্য চুক্তি ও শুল্ক কমানোর সুযোগ দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চলে দর কষাকষি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি দেয় হোয়াইট হাউজ। এরপরই তিন দফায় আলোচনায় বসে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। বাণিজ্য বৃদ্ধি ও ঘাটতি মেটাতে বেশ কিছু শর্ত পূরণে একমত হয় দুই দেশ। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭ লাখ টন গম আমদানির পাশাপাশি এবং এলএনজি ও বোয়িং কেনার বিষয়েও সমঝোতা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এছাড়া, বেসরকারিভাবে সয়াবিন ও তুলা আমদানি বাড়ানোরও বিষয়ের একমত হয় ঢাকা ও ওয়াশিংটন। এরপরই ৩৫ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারিত হয় বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, ২০ শতাংশ শুল্কারোপের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় টিকে থাকবে বাংলাদেশ। রপ্তানি বাণিজ্য খুব একটা বাধাগ্রস্ত হবার শঙ্কা নেই বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের প্রত‍্যাশা ২০ শতাংশের নিচে ছিল। ফেসবুক পোস্টে একথা জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এতদিন বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। এখন নতুন ২০ শতাংশ যুক্ত হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে গুণতে হবে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক। যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অনেকটা সহায়তা করবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের বিদেশি আয়ের প্রধান চালিকাশক্তি বলা হয় তৈরি পোশাক শিল্পকে। যেখানে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। দেশের বার্ষিক জিডিপিতে পোশাক খাতের অবদান প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের একক বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের ওপরই সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য নয়াদিল্লির ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে জ্বালানি তেলের মজুত উন্নয়নের চুক্তি করে শুল্ক হার কমিয়ে ১৯ শতাংশ করেন ট্রাম্প। এছাড়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্সের ওপর ১৯ এবং শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে ওয়াশিংটন।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করেন। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক এখনো অসম, সেসব দেশের পণ্যের ওপর আরোপ করা হয়েছে অতিরিক্ত শুল্ক। এ পর্যন্ত ৭০ টিরও বেশি দেশের সঙ্গে নতুন পারস্পরিক শুল্ক হার নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে কার্যকর হবে।

এসএস