প্রতি সপ্তাহে অনলাইনসহ বিশ্বজুড়ে ২৭ কোটি মানুষ ওয়ালমার্ট থেকে কেনাকাটা করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সুপার শপ জায়ান্ট ২৪টি দেশে ১০ হাজারের বেশি আউটলেট পরিচালনা করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্স বাজারের ৬ শতাংশ এবং নিত্যপণ্য বাজারের ২৫ শতাংশও নিয়ন্ত্রণ করে ওয়ালমার্ট।
প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালমার্ট নিট মুনাফা করেছে সাড়ে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ কম।
ওয়ালমার্টের পণ্যের অন্যতম উৎস চীন, কানাডা, ভারত, মেক্সিকো ও ভিয়েতনাম। এসব দেশের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের কারণে কলা থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের পর্যন্ত আমদানি খরচ বেড়েছে। এমন অবস্থায় ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে জুন থেকেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর আভাস দিয়েছে ওয়ালমার্ট।
তবে ওয়ালমার্টের এমন পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শুল্কের দোহাই দিয়ে মূল্য বৃদ্ধির বোঝা ক্রেতাদের ঘারে চাপানো যাবে না। বাড়তি খরচ প্রতিষ্ঠানকেই বহন করতে হবে।
সামাজিক যোগামাধ্যমের এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, ওয়ালমার্টকে শুল্কনীতির ওপর দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। প্রতি বছর তারা কোটি কোটি ডলার আয় করে।
জবাবে ওয়ালমার্টের সিইও ডগ ম্যাকমিলন বলেছেন, খুচরা খাতে মুনাফার পরিমান খুব কম। তারপরও খাদ্যদ্রব্যের দাম যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে তার প্রতিষ্ঠান।
ওয়ালমার্টের সিইও ডগ ম্যাকমিলন বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি শুল্কারোপের সমস্ত ঝুঁকি এড়িয়ে চলার। আমাদের যদি পণ্যের দাম বাড়াতেই হয়, সেই মাত্রাটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করবো। যতটা সম্ভব দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখবে ওয়ালমার্ট। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ভোক্তার অর্থ বাঁচানো।’
মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে কমেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
গত বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে মোটরযান ও যন্ত্রাংশের প্রায় ১০ শতাংশ দাম বেড়েছে। আর খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক পরোক্ষভাবে পণ্যের খরচ বাড়ায়, যা সাধারণত ভোক্তাকেই বহন করতে হয়। ট্রাম্পের শুল্কনীতি এরইমধ্যে অনিশ্চত পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলেও মত তাদের।
অটোমোটিভ ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রধান স্টেফানি ব্রিনলি বলেন, ‘শুল্ক কৃত্রিমভাবে উৎপাদন খরচ বাড়ায়, এটি পণ্যের কাঁচামালের খরচের ওপর নির্ভর করে না। আর শুল্কের বোঝা সাধারণত ক্রেতাকেই পরিশোধ করতে হয়। আমদানিকারকরা শুল্ক প্রদান করেন। এটি রাজনীতিবিদরাও পরিশোধ করেন না।’
এর আগে, ট্রাম্পের শুল্কারোপের বিরূপ প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বের ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন।
হোয়াইট হাউজের কঠোর সমালোচনার মুখে পরবর্তীতে সেই প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি। এর ঠিক এক মাসের মাথায় শুল্ক নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুললো ওয়ালমার্ট।