পঞ্জিকার পাতায় বর্ষার আগমন জুনের মাঝামাঝিতে। ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে আন্দামান-নিকবর দ্বীপপুঞ্জে স্বাভাবিকের চেয়েও এক সপ্তাহ আগে, ১৩ মে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। কেরালাতেও বর্ষার ঘনঘটা, তাও নির্দিষ্ট সময়ের খানিকটা আগেই। ধারণা করা হচ্ছে, টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এবারও অপ্রত্যাশিত বেশি বৃষ্টি বয়ে যাবে ভারতের ওপর দিয়ে।
কৃষিনির্ভর ভারতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর বৃষ্টির সময়। দেশটিতে বছরের মোট বৃষ্টির ৭০ শতাংশই হয় এই চার মাসে। পুরো উপমহাদেশে ধান চাষে গুরুত্বপূর্ণ এ সময়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতময় পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছিল চালের বাজারেও; দাম বেড়েছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ।
এরপর অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পর থেকে এশিয়ার প্রধান বাজারগুলোতে ২ সপ্তাহে চালের রপ্তানি মূল্য কমেছে; বিশেষ করে ভারতীয় চালের রপ্তানি মূল্য নেমে এসেছে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
অভ্যন্তরীণ মজুত পর্যাপ্ত বলে ইন্দোনেশিয়া চাল আমদানি স্থগিত করায় বাজারে সেসময় সরবরাহও ছিল বেশি। জাপানে চালের গড় দাম ১৮ সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘৫ কেজির এক বস্তা চালের দাম ২ হাজার ইয়েনের নিচে নামলে আমার জন্য অনেক সুবিধা হতো। এখনও আসলে আমার সাধ্যের বাইরে রয়েছে দাম।’
আরেকজন বলেন, ‘মজুতের চাল আসলে কতটা বাজার পর্যন্ত পৌঁছেছে, জানি না। আমরা এখনও পাইনি। পাঁচ কেজির সাধারণ বস্তার দাম এখনও অনেক বেশি।’
সর্বভারতীয় চাল রপ্তানিকারক সমিতির তথ্যমতে, ভারতের সবচেয়ে প্রিমিয়াম বা উচ্চ মানের চাল বাসমতি বিশ্ববাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি মেট্রিক টন এক হাজার থেকে এক হাজার সাতশ’ মার্কিন ডলারে।
থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের একই মানের চালের তুলনায় ভারতীয় বাসমতির দাম টন-প্রতি ৫০ ডলার কম।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যানুযায়ী, গেলো দুই সপ্তাহ ভারতের পাঁচ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের দাম ছিল প্রতি টন ৩৮৪ থেকে ৩৯১ ডলার; পাঁচ শতাংশ খুদযুক্ত সাদা চাল বিক্রি হয় ৩৭৮ থেকে ৩৮৫ ডলারে।
পাক-ভারত সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে— এমন শঙ্কায় দুই দেশ চাল রপ্তানি বন্ধ করে মজুত বৃদ্ধি এবং বন্দরে অবরোধ আরোপের পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও ছিল শঙ্কা।
অস্ত্রবিরতির পর সে শঙ্কা আপাতত কেটে গিয়ে চলতি বছর চাল রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের। তবে কী পরিমাণ রপ্তানি বাড়তে পারে, সে আভাস মিলতে শুরু করবে ১৫ জুনের পর যখন বেশিরভাগ অঞ্চলে ধানের বীজ রোপণ শুরু হবে।
কিন্তু কাশ্মীর ইস্যুতে দ্বন্দ্বের জেরে পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি এখনও বন্ধ রেখেছে ভারত। বর্তমানে চুক্তি স্থগিত করে ভারত সরকারের বাঁধ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত চালের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
জলবায়ুবিদরা বলছেন, বর্ষায় বৃষ্টির ধরন বদলে যাওয়া বা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বর্ষার আগমনে এসব নদীর পানিপ্রবাহ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে বিষয়ে দ্রুত আলোচনায় বসা উচিত ভারত ও পাকিস্তানের।
গেলো বছর বাসমতি চালের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রত্যাহার, দরিদ্রদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে চালের মজুত বৃদ্ধি, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা বাড়তি চাল নিয়মিত নিলামে তোলাসহ ভারত সরকারের নানা পদক্ষেপে চাল রপ্তানি বাড়বে বলে আশা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের।
ভারতীয় চালের বিপুল মজুত আঞ্চলিক বাজারেও চালের দামে প্রভাব ফেলেছে এবং ব্যবধান কমিয়েছে থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সাথে।
বিশ্ববাজারে চাল রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা ভারত ও চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় অংশ, বিশেষ করে মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও লাওস।
প্রধান খাদ্যশস্য হলেও পর্যাপ্ত উৎপাদন হয় না বলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এসব দেশ চাল আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য আর মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও ভারতীয় উপমহাদেশে উৎপাদিত চালের বড় ক্রেতা।