২০২২ সালে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোড় ঘুরে গেছে বিশ্ব বাণিজ্যের। বিশেষ করে অস্ত্র ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর তথ্য বলছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করে ইউক্রেন। আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ বেড়েছে প্রায় ১০০ গুণ। এর আগে অস্ত্র কেনায় এগিয়ে ছিল সৌদি আরব যা ২০২০ থেকে পরের চার বছরে ৪১ শতাংশ কমেছে।
এ সময়ে বিশ্বের মোট অস্ত্র রপ্তানির ৮.৮ শতাংশই আমদানি করে ইউক্রেন। যার ৪৫ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। জার্মানি পাঠায় ১২ শতাংশ আর পোল্যান্ড ১১ শতাংশ।
গত দুই দশকের মধ্যে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র আমদানিতে মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে এগিয়ে ইউরোপ। আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ১৫৫ শতাংশ বেড়েছে আমদানির পরিমাণ। তবে শীর্ষ ১০ এ আছে ইউরোপের একমাত্র দেশ ইউক্রেন।
অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সমসাময়িক এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রের বাজার কমেছে ২০ শতাংশ। যদিও এই সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ অস্ত্র আমদানিকারকের তালিকায় আছে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ, কাতার, সৌদি আরব, মিশর এবং কুয়েত। এরমধ্যে কাতারের অবস্থান তৃতীয়।
মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ করা এসব অস্ত্রের ৫২ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। আছে ইতালি, ফ্রান্স এবং জার্মানিরও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক সংঘাত এবং উত্তেজনার কারণে দেশগুলোতে অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে।
গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র, যা প্রায় ৬৬ শতাংশ। বাকি ৩৩ শতাংশ পাঠায় জার্মানি। আর ইতালি পাঠায় ১ শতাংশ। তারপরও অস্ত্র আমদানিতে বিশ্বে ১৫ তম অবস্থানে ইসরাইল।
এই যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুথি গোষ্ঠী ইসরাইলে হামলার জন্য ইরানের অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে গত ১৫ বছর ধরে অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ায় পশ্চিম আফ্রিকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম অবনতি হচ্ছে। গত ৪/৫ বছরে এখানে অস্ত্র আমদানি বেড়েছে প্রায় ৮২ শতাংশ। যারমধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে নাইজেরিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় অস্ত্র কোম্পানিগুলো তাদের প্রভাব বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অস্ত্র রপ্তানি করছে।
অন্যদিকে এই সময়ে ফুলেফেঁপে ওঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসা। ৩৫ শতাংশ থেকে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে দেশটির মোট যোগান। মার্কিনীদের অস্ত্র সরবরাহ হচ্ছে ১০৭ টি দেশে। যার মধ্যে শীর্ষে আছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি ৬৪ শতাংশ কমেছে। ৩৩ টি দেশে মস্কো অস্ত্র পাঠালেও দুই তৃতীয়াংশই যায় ভারত, চীন ও কাজাখিস্তানে। অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফ্রান্স। এই অবস্থানে আগে ছিল রাশিয়া।