ট্রাম্পের শুল্কনীতি: ২৬ দেশের বাণিজ্যে অস্থিরতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

প্রথম দফার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের ২৬টি বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই শুল্কনীতির কারণে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছে উন্নয়নশীল দেশও। কয়েকটি দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান প্রত্যাশা করলেও ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কোনো কোনো রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোট। এতে করে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় শুরু হয়েছে এক অস্থিরতা। প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিপরীতে কতখানি প্রতিরোধ গড়তে পারছে ভুক্তভোগী দেশ।

ক্ষমতা গ্রহণের ৩ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে গেল এপ্রিলে দেশভিত্তিক একটি পাল্টা শুল্কনীতি বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ শীর্ষক শুল্কনীতি ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং ট্রাম্পের ভাষায় অন্যায্য বিদেশি বাণিজ্যনীতির বিপরীতে একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই এমন সিদ্ধান্ত নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এরপর ৯০ দিনের জন্য আরোপিত এই শুল্ক স্থগিত করে আলোচনার সুযোগ দেন বাণিজ্য অংশীদারদের। ৯ জুলাই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হলে দুই দফায় মোট ২৬টি দেশ ও পশ্চিমা জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেন নতুন শুল্কের মাত্রা। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন ব্রাজিলের পণ্যে। আর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয় যুক্তরাজ্যের ওপর। যা কার্যকর হবে পয়লা আগস্ট থেকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই শুল্কনীতির প্রভাবে অস্থিরতা শুরু হয়েছে বিশ্ববাজারে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমঝোতা নাকি শুল্কের বিপরীতে পাল্টা শুল্ক- এমন দোলাচলে পড়েছেন বিশ্বনেতারা। নিজেদের সক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে চলছে কূটনৈতিক বোঝাপড়া। আর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে কতটা লাভবান হবেন মার্কিনরা।

অংশীজনদের চাপে রেখে স্বার্থ হাসিলের পুরনো কূটনীতিতে আস্থা রাখলেও এবার শুল্ক ইস্যুতে ধাক্কা খেতে হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। ব্রাজিলের পর প্রকাশ্যে ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিপরীতে ওয়াশিংটনকেই এবার পাল্টা শুল্কের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে মার্কিন পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগনীতিতে হাঁটবে ইইউ।

২০২৩ এর শেষভাগে বলপ্রয়োগ-বিরোধী শক্তি বা এসিআই গঠন করে ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। উদ্দেশ্য কোনো তৃতীয় শক্তি যদি জোটের সদস্য রাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি পরিবর্তনে চাপ দেয়, তাহলে জোটবদ্ধভাবে ঐ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। ইইউ'র সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির জবাবে বলপ্রয়োগ-বিরোধী শক্তিকে অস্ত্র হিসেবে হাজির করবে পশ্চিমা এই জোট।

ট্রাম্পের এই শুল্ক যুদ্ধের সবচেয়ে বড় দুই প্রতিপক্ষ চীন ও রাশিয়া। এপ্রিলে চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্তের পর ওয়াশিংটনের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত জানায় বেইজিং। চীনের এমন পাল্টা চালে গেল মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রাথমিক আলোচনার পর উভয় পক্ষ তাদের নিজ নিজ শুল্ক হার একধাক্কায় ১১৫ শতাংশ কমাতে সম্মত হয়। যাকে ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগ নীতির ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যা দেন বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মরিটজ কোচ বলেন, আমি মনে করি ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের কৌশল সবাই ভালোভাবেই অনুধাবন পেরেছেন। দুর্লভ খনিজের বাজারে চীনের আধিপত্য আছে। যেকোনো উৎপাদন খাতে এর গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। মার্কিন অস্ত্র নির্মাতাদেরও এই খনিজ প্রয়োজন। যে মুহূর্তে চীন এ বিষয়টি সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র টের পেয়েছে চাপ দিয়ে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব নয়।

আর ৫০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার পণ্যে দ্বিতীয় দফায় শুল্ক আরোপের যে হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প তাকে ফাঁকা বুলি হিসেবেই দেখছে মস্কো। ক্রেমলিন যদিও আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সময় নিয়ে বিবেচনার বার্তা দিচ্ছেন তবে রুশ গণমাধ্যমের দাবি, এটা ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে চাপ দেয়ার কৌশল মাত্র।

এদিকে, বাণিজ্য সক্ষমতার বিচারে যে সব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টেক্কা দেয়ার মতো অবস্থায় নেই তারা বেছে নিচ্ছেন আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান সূত্র। ভারত পাকিস্তানের পণ্যে শুল্কহার এখনও ধার্য না হলেও, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর আরোপিত শুল্ক ভাবাচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানিকারকদের। বিশেষ করে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার চেয়েও বেশি শুল্ক গুনতে হবে এমন আশঙ্কা থাকায় আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট থেকে বের হওয়ার বিকল্প নেই বাংলাদেশের।

ইএ