পশ্চিমাদের অস্ত্র সহায়তার ওপরই টিকে আছে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের হার জিতের ভবিষ্যত। এতোদিন ইউক্রেনকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সামরিক সহায়তা দিয়ে গেলেও সম্প্রতি মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানদের ভোটের কারণে আটকে যায় ইউক্রেনের জন্য কোটি ডলারের সমরাস্ত্র সহায়তার প্রস্তাব।
এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে ঝটিকা সফরে আসেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, পুতিন যতো চেষ্টাই করুক, ইউক্রেন দখল করতে পারবে না রাশিয়া।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমরা কোন ভূখন্ডের অধিকার ছাড়িনি। আমরা হার মানবো না। ইউক্রেন এই যুদ্ধে জিতবে। ন্যাটোর সদস্য কবে হবো আমরা এই প্রশ্ন থাকবে বাইডেনের কাছে। আমরা পুতিনের বিরুদ্ধে আছি। ইউক্রেনের সেনাদের ধন্যবাদ রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার জন্য। আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ ভালো অবস্থানে আছি। রাশিয়ার জব্দ করা ৩০ হাজার কোটি ডলারের অর্থ নিয়েও দ্রুত সিদ্ধান্তে আসতে হবে।'
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিতে না পারায় লাভবান হচ্ছে রাশিয়া। যদি কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেয়া না যায়, সেটা হবে রাশিয়ার জন্য বড়দিনের বড় উপহার।
বৈঠকে বাইডেন দেশের সমরাস্ত্রের মজুত থেকে ইউক্রেনকে আরও ২০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে প্রয়োজন পড়বে না কংগ্রেসের অনুমোদন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, পুতিন যতোই বাঁধা দিক, ইউক্রেনের ভবিষ্যত ন্যাটো।
বাইডেন বলেন, ‘শুধু ইউরোপ নয়, পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা আর ভবিষ্যত নির্ভর করছে ইউক্রেনের যুদ্ধে হার জিতের ওপর। আমেরিকা সবসময় স্বাধীনতার পাশে। ইউক্রেন জিতেছে সেটা দেখতে চাই। ন্যাটো শক্তিশালী হয়েছে, ইউক্রেনের ভবিষ্যত ন্যাটো। সব সদস্য দেশ একমত হলেই ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে। তার আগে ইউক্রেনকে যুদ্ধে জিততে হবে। আমাদের সেটা নিশ্চিত করতে হবে।'
নতুন এ সামরিক সহায়তার প্যাকেজে আছে হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম হিমার্স, হাই স্পিড এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল, অ্যান্টি আর্মার সিস্টেম, আর্টিলারি রাউন্ড, মিসাইল, জেনারেটরসহ আরও অনেক সমরাস্ত্র।
জেলেনস্কি জানান, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ৬ লাখ সেনা ভয়ঙ্কর শীত আর তুষারপাতের মধ্যে রুশ সেনাদের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। শস্য রপ্তানির নতুন করিডোর স্থাপন করেছে। কোনভাবেই ইউক্রেন নিজেদের ভূখন্ড রাশিয়াকে কেড়ে নিতে দেবে না বলে ঘোষণা দেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রতিদিন প্রমাণ করছি ইউক্রেন জিতবে। কৃষ্ণসাগরে রাশিয়াকে প্রতিহত করেছি আমরা। সহায়তার ওপর ধীরে ধীরে নির্ভরশীলতা কমছে আমাদের। আমরা সঠিক পথ আছি। ২০২৪ সালের মধ্যে রাশিয়ার সক্ষমতা আমরা শেষ করবো এবং সেনা অভিযানের সমাপ্তি হবে। মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে যে স্বাধীনতা আমাদের।'
এর আগে রিপাবলিকান নেতারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কোনভাবেই এখন ইউক্রেনের জন্য ৬ হাজার কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার প্যাকেজের অনুমোদন দেয়া সম্ভব না। এদিকে, শীত মৌসুমে ইউক্রেনকে আরও কোণঠাসা করতে হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া।
একদিকে রাশিয়া ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, অন্যদিকে ইউক্রেন ড্রোন ভূপাতিত করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো। এর আগে ক্রেমলিন জানায়, জো বাইডেন আর ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে মস্কো।
ক্রেমলিনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা যুদ্ধক্ষেত্রে কিয়েভকে সাহায্য করতে পারেনি। যদিও বাইডেন জানান, ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়া নিয়ে পিছু হটবে না যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘জরুরি তহবিল থেকে ইউক্রেনকে সহায়তা দিচ্ছি। এখানে বেশিরভাগই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য। ইউক্রেনের জন্য আমরা বেশ গর্বিত। কিন্তু অনুমোদন ছাড়া দেশটিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা আমরা দিতে পারিনা। পুতিন খুশি হবে জেনে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা করতে পারছেনা। আমাদের তাকে ভুল প্রমাণ করতেই হবে। ইউক্রেনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব না।'
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, প্রায় ২ বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ১ লাখ ২৫ হাজার সেনার মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার সামরিক যান। মস্কো বারবরই সতর্ক করে আসছে, পশ্চিমা অস্ত্র সহায়তা এই যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।