যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই তড়িঘড়ি করে ভারত ও পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে সিএনএন জানায়, পাক-ভারত যুদ্ধে বড় ধরনের বিপদের শঙ্কা থেকেই বিষয়টি নিয়ে দুইদেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলে ওয়াশিংটন। এরপরই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই দেশ। তবে, কত দিন স্থায়ী হবে এ যুদ্ধবিরতি, তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান বিশ্লেষকরা।
শনিবার সকালে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টাপাল্টি হামলা, আর বিকেলে আচমকা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা অনেকটা নাটকীয়তার তৈরি করেছে দু'দেশের ভূরাজনীতিতে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এ দুই পরাশক্তির যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাই এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।
আরো পড়ুন:
সিএনএনের খবরে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিয়ে অনেকটা টানাটানি করছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ গত ৭ মে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর ও পাকিস্তান ভূ-খণ্ডে যখন হামলা করে ভারত তখন অনেকটা গাঁ ছাড়া ভাব দেখান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তা সমাধান করতে বলেন তিনি।
অথচ এই বক্তব্যের দিন তিনেক পরই নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কথা জানান দেন তিনি। এমনকি গত দুই দিন আগেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ থামানো যুক্তরাষ্ট্রের কাজ নয়। এ বিষয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই।
অথচ এর ৪৮ ঘণ্টা পরই মার্কিন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করে অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করান তাদের।
এতকিছুর পরও হঠাৎ করে পাক-ভারত যুদ্ধ থামাতে আগ বাড়িয়ে কেন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে এসেছে? এর উত্তর জানিয়েছে সিএনএন। সেখানে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের কাছে তথ্য রয়েছে পরাশক্তিধর এই দুই দেশের যুদ্ধ বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনছে। যা খুবই উদ্বেগজনক। তাই তড়িঘড়ি করে বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। এর পর মার্কিন প্রশাসনের তিন সদস্যের একটি দল ক্রমাগত ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে থাকে।
আরো পড়ুন:
আর পুরো বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানানো হয়। তার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে সরাসরি ফোনে কথা বলেন। সেসময় দুই দেশের সরকার প্রধানের কাছে উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্যের কথা তুলে ধরেন তারা।
তবে যুদ্ধবিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার বিষয়ে পাকিস্তান কৃতজ্ঞ থাকলেও বিষয়টি অস্বীকার করছে নয়াদিল্লি। ভারতের তথ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নয় বরং ভারত-পাকিস্তান দুদেশের কূটনৈতিক আলাপের মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। এমনকি সোমবার পাক-ভারতের বৈঠকের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। অথচ যুদ্ধবিরতির মিনিট কয়েকের মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু'দেশের পরবর্তী বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলো।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই আবার দুই পক্ষই একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন তা লঙ্ঘনের। নয়াদিল্লি বলছে, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে শনিবার রাতে হামলা করেছে পাকিস্তানের সেনারা। অপরদিকে ইসলামাবাদেরও দাবি সীমান্তে গোলাগুলি করেছে ভারতীয় সেনারা।
আরো পড়ুন:
এ পরিস্থিতিতে চিরবৈরি এ দু'দদেশের যুদ্ধবিরতি কতদিন স্থায়ী হয় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিশ্লেষকদের মত, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যেতে পারে যেকোনো সময়।
জন হপকিন্স বৈদেশিক নীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডানিয়েল মার্কি সিনিয়র ফেলো বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান একে অপরের সঙ্গে যে সংঘাতে জড়িয়েছে এতে বড় পরিসরে তেমন লাভ দেখতে পাচ্ছে না কোন দেশেই। তবুও যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর একবার যদি যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায় তবে স্থল পর্যায়ে যুদ্ধের শঙ্কা দেখছি এবং পরিস্থিতি তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’
যদিও ভারত ও পাকিস্তান দু'দেশেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।