মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অদ্ভুত শুল্কনীতির কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্রে তো মন্দা নিজেই ডেকে আনছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টই। অবশেষে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে তিন মাসের জন্য সরে এসেছেন ট্রাম্প নিজেই। এমন অবস্থায় শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে মুখ খুলেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বলেছেন, আধিপত্যবাদ শুধু ক্ষতি করে। চীনা-সিলাক ফোরামের সম্মেলনে শি জিনপিং বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না।’
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ কিংবা শুল্কযুদ্ধে কোনো দেশ বিজয়ী হতে পারে না। আধিপত্যবাদ শুধুই কোণঠাসা করে। উন্নয়ন আর পুনরুজ্জীবিতকরণ আমাদের অধিকার। নিরপেক্ষবাদ আর ন্যায়কেই অনুসরণ করা উচিত। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী চীন। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা খুব জরুরি।’
বেইজিংয়ে ক্যারীবীয় আর লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য ক্যারীবীয় অঞ্চল লাতিন আমেরিকা আর চীন গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই অঞ্চলের দেশগুলোকে ট্রাম্প ওয়াশিংটনের অক্ষে টানার বরাবরই চেষ্টা করছেন।’
শি জিনপিং বলেন, ‘ভূরাজনীতি, জোটগত দ্বন্দ্ব, নিজের দেশ সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে রক্ষণশীল ভূমিকায় চলে যাওয়ার পক্ষে নয় চীন। অন্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করতে আগ্রহী বেইজিং।’
শি জিনপিং বলেন, ‘লাতিন আমেরিকা আর ক্যারিবীয় দেশগুলোকে সহায়তায় প্রায় ১০০ কোটি ডলারের ক্রেডিট লাইন ঘোষণা করছি। এর মধ্যে যেকোনো পরিমাণের অর্থ দেশগুলো চীনের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারবে। চীন আর লাতিন আমেরিকার বাণিজ্য ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে নিজের তৈরি করা খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে এনেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে হতেও হয়নি। অর্থনীতিবিদরা এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে কি না। কয়েক দশকের মধ্যে এখনও শুল্ক অনেক বেশি।
অর্থনীতিবিদ মারকুস নোল্যান্ড বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আসলেন, শুল্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ছিল। কিন্তু সেটা ১৪৫ শতাংশে গেছে। চীনও উচ্চ শুল্ক দিয়েছে। এখন সেটা ৩০ শতাংশে নেমেছে। তাও এটা অনেক। বাণিজ্য ব্যাহত হবেই। ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ স্থায়ী হবে না। ট্রাম্প অন্যান্য পণ্যে শুল্কারোপ করতে চাইছেন। যেগুলো আমরা ভারত আর চীন থেকে পাই। আবারও শুল্ক বাড়লে চীনের সঙ্গে আবারও বৈরিতা শুরু হবে।’
কিন্তু কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে সমঝোতা করলেন? বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তার উত্তরও। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক মন্দা টের পেয়ে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছেন না ট্রাম্প। দুই পক্ষ থেকেই পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমিয়ে আনার বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে কিছুটা অবাক করার মতো হলেও এতে সম্মতি রয়েছে দুই দেশের। বেইজিং বলছে, আপাতত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। যেই সিদ্ধান্তে সম্মত যুক্তরাষ্ট্রও।
মারকুস নোল্যান্ড বলেন, ‘নিজের দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বুঝতে পেরে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্কারোপের আসলে কোনো প্রয়োজন নেই। এটাও অবাক করার মতো, কোন স্বার্থে এখন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরছেন ট্রাম্প। কিন্তু ফলাফল দৃশ্যমান, বিশ্বের শেয়ারবাজার চাঙা। কিন্তু এখন সেই যুদ্ধ থেকে ট্রাম্প নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন, যেই যুদ্ধ শুরুই হওয়ার কথা ছিল না।’
তবে রয়েছে আশঙ্কার বার্তাও। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাণিজ্যযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। শুল্কারোপ হঠাৎ করে ট্রাম্পের মাথা থেকে গায়েব হয়ে যাবে না। এখনও সেমিকন্ডাক্টর, ফার্মাসিউটিক্যাল, তামা, বিরল খনিজ শুল্কের আওতায় রয়েছে। সাময়িক চুক্তিতে অর্থনীতি বিভক্ত হওয়া আপাত দৃষ্টিতে সম্ভব হলেও পুরোপুরি মন্দা ঠেকাতে শুল্কের আওতায় থাকা পণ্যের তালিকা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। যেন ২০০৮ সালের মহামন্দার মতো কোনো পরিস্থিতি ফিরে না আসে।