পূর্বের গতিতে ফিরেছে ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর সাধারণ বাসিন্দাদের জীবন-যাপন। রাস্তাঘাট ও দোকানপাটে নির্ভয়ে চলাচল করছেন তারা। বিমান চলাচল শুরু করেছে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগর বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্বাভাবিক হওয়ায় হজ যাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার বিষয়ে আর কোনো বাধা নেই।
যদিও জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগর, পাঞ্জাবের চন্ডীগর ও অমৃতসারসহ মোট ৭টি শহরে ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ভারতীয় বোয়িং ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়া। নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা এসব শহরে বিমান চলাচল করবে না বলে জানিয়েছে বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠান দুটি।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও অমৃতসারের নাগরিকরা এখন পাকিস্তানের হামলার দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে পারছে না। অনেকে আবার মাথার গোজার শেষ আশ্রয়টুকুও হারিয়েছেন। তাই এদের অনেকে আবার পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে এর শোধ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পাকিস্তান যখন ড্রোন হামলা করে তখন বাইরে বসেছিলাম। ড্রোনের শব্দ পেয়ে দৌঁড়ে ঘরে চলে যাই।’
আরেকজন বলেন, ‘পাকিস্তান যখন হামলা করেছিল তখন অনেক ভয় পেয়েছিলাম। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাবো, কী করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’
ভারতীয়দের মধ্যে এখনও প্রতিশোধে আগুন জ্বললেও পাকিস্তানের বাসিন্দাদের মুখে ভিন্ন সুর। দুদেশের যুদ্ধবিরতিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তারা।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পাকিস্তান ভারতকে যথাযথ জবাব দিয়েছে। এখন আর পাকিস্তানকে কেউ দুর্বল ভাবতে পারবে না। যাই ঘটেছে যুদ্ধের চার দিনে পাকিস্তানের শক্ত জবাব ছিল। তবে যুদ্ধবিরতি হওয়াতেও ভালো হয়েছে।’
তবে গত সোমবার ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা জন্য বৈঠকে বসার কথা ছিল। যা বাতিল ঘোষণা করেছে নয়াদিল্লি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি আলোচনা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত পাকিস্তানের বাসিন্দাদের।
ভারত-পাকিস্তানের শান্তিচুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসলামাবাদ কৃতজ্ঞ থাকলেও এ নিয়ে মিথ্যাচার করছে নয়াদিল্লি। এমনকি এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি নিয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন বলে মত ভারতীয় অনেক বিশ্লেষকের।
ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক উদয় ভাস্কর বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সাধুবাদ জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে খেলার সুযোগ পাবে। ভারতের কাছে বিষয়টি অপ্রত্যাশিত।’
ভারত-পাকিস্তানের এবারের যুদ্ধে চীন বেশ শক্তভাবে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিপক্ষ ভারতকে তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষক শ্রীকান্ত কোন্ডাপল্লি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে চীন যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে এতে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাবে। তিব্বতে সীমান্তের পাশে এখনও কোনো ধরনের সামরিক মহড়া চালায়নি ভারত। চীন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ভুল করেছে।’
এদিকে যুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকেই ব্যবসা বাণিজ্যে সহায়তার করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ যদি যুদ্ধ বন্ধ না করে তবে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যুদ্ধ বন্ধ করেন। যদি যুদ্ধ বন্ধ করেন তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করার সুযোগ রয়েছে। আমার সঙ্গে যেভাবে বাণিজ্য করতে পারবেন তা আরও কারও সাথে পারবেন না। আমরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে যাচ্ছি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে।’
পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে দু’দেশের লাখো মানুষকে পারমানবিক যুদ্ধের ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা করেছেন বলে দাবি ট্রাম্পের।