দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ৬৪০টি কন্টেইনারবাহী লাইবেরিয়ান জাহাজটি ডুবতে বসেছিল ভারত মহাসাগরে। সমন্বিত চেষ্টায় ২৪ নাবিকসহ রোববার (২৫ মে) জাহাজটিকে রক্ষা করে ভারতীয় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড।
ভারত আইএনএস সুজাতার ক্যাপ্টেন অর্জুন শেখর বলেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে আমাদের। সাগরে কন্টেইনার পড়ে গিয়েছিল, ধ্বংসাবশেষ ছিল। সব পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে জাহাজের কাছে পৌঁছানো সহজ ছিল না।’
লাইবেরিয়ান কার্গো জাহাজের ক্যাপ্টেন ইভানোভ আলেক্সান্ডার বলেন, ‘আমাদের বাঁচানোর জন্য ভারতীয় কোস্ট গার্ডকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। গতকাল (রোববার) থেকে তারা আমাদের খেয়াল রাখছে, পর্যবেক্ষণ করছে, যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং আমরা ঠিক সময়ে বেঁচে ফিরেছি।’
আরব সাগরে সৃষ্ট সাইক্লোনের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। রোববারও রাতভর বৃষ্টিতে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানী নয়াদিল্লিতে। অনেক এলাকায় ছাদ পর্যন্ত তলিয়ে গিয়ে পথেই আটকা পড়ে বহু যানবাহন। পরিস্থিতির জন্য দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতা প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সুড়ঙ্গগুলো পরিষ্কার করা না হলে এভাবে ময়লা জমতে থাকবে। এরপর সরকার যে পদক্ষেপই নিক না কেন, জলাবদ্ধতা বাড়তেই থাকবে।’
আরেকজন বলেন, ‘আমাদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, কেউ এগুলো মরামত করে না। সব কর্মী অকর্মা। কেউ কাজ করে না।’
বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতেও ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। মহারাষ্ট্রের আরেক শহর পুনের ১০টি এলাকায় ভারি বৃষ্টির কারণে ঢল নেমেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়ি ছেড়ে সরে গেছে শতাধিক পরিবার। ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। অন্যদিকে, দক্ষিণের কর্ণাটক, কেরালাসহ বিভিন্ন রাজ্যেও চলছে ভারি বৃষ্টি।
কর্ণাটকে সোমবার (২৬ মে) ও মঙ্গলবার (২৭ মে) এবং কেরালার ১৪ জেলায় ২৪ ঘণ্টার জন্য সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ। কর্ণাটকের প্রাদেশিক রাজধানী বেঙ্গালুরুতে সপ্তাহভর এবং কেরালার থিরুভানাথাপুরাম, কোল্লাম ও আলাপ্পুঝাসহ রাজ্যজুড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ঝরবে বলে জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে।
এদিকে প্রতিবেশী পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও সংলগ্ন এলাকা এবং খাইবার পখতুনখোয়া, পাঞ্জাব ও উত্তর বেলুচিস্তাও ভারি বৃষ্টি আর বজ্রসহ ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মাত্র একদিন আগেই পাঞ্জাবে মুষলধারে বৃষ্টি আর প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টিতে প্রাণ যায় ১৯ জনের।
জানা গেছে, অন্তত ১২৪টি স্থাপনা ধসে পড়েছে রাজ্যটিতে, যার ৮০ শতাংশই সোলার প্যানেল।
অন্যদিকে, পাঞ্জাবের দক্ষিণে উল্টো চিত্র। ভাওয়ালপুরে তাপমাত্রার পারদ ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। দাবদাহের তীব্রতা, অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি থাকবে সপ্তাহভর, জানিয়েছে পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এ গরমে পরিবেশ দূষণের অবদান অনেক। সমানে গাড়ি বাড়ছে। এতে শহরে গরম বাড়ছে। পর্যাপ্ত গাছপালা নেই। সমানে গাছপালা কাটা হলেও নতুন গাছ রোপণ করা হচ্ছে না।’
আরেকজন বলেন, ‘গরম অনকে বেশি। সব গাছ কেটে ফেলছে। আমরা কোথায় যাবো? দিনের পর দিন গরম বেড়েই চলেছে। গরমের কারণে কাজ পাই না। অনেক দুর্ভোগের মধ্যে আছি। তার ওপর বিদ্যুৎও থেমে থেমে যায়-আসে।’
পঞ্জিকার পাতায় বর্ষার আগমনের আগেই আরব সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ভারত ও পাকিস্তানের কোথাও তীব্র ঝড়বৃষ্টি-কোথাও গরমে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। চলতি সপ্তাহেও দেশ দু’টিতে এমন বিরূপ আবহওয়া বিরাজ করবে পূর্বাভাসে জানা গেছে।