ইরান-ইসরাইলের সংঘাতে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেকটা পায়ে পাড়া দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শত্রুতা তৈরি করছেন তিনি।
পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যেই ট্রাম্প বার বার হুমকি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ইরান সম্মত না হলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। মূলত তখন থেকেই আলোচনা অনেকটা ভেস্তে যায়।
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে হুমকি আখ্যা দিয়ে গেল ১৩ জুন হামলা চালায় ইসরাইল। ইরান এটিকে ইসরাইলের অবৈধ আগ্রাসন বললেও, পূর্ণ সমর্থন জানান ট্রাম্প। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা নিয়ে ক্ষমতায় এসে নিজেই যুদ্ধ বিস্তৃত করছেন।
ট্রাম্পের নির্দেশেই ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। হামলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েও ট্রাম্পের বক্তব্যে আছে গড়মিল।
হামলার পর সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন জানায়, ইরানের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন নয়, পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করাই যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ছিল। এরপরই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইরানের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে গোটা আরব উপসাগরে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন কর্মকাণ্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ নিজ প্রশাসনে। কারণ কংগ্রেসে অনুমতির ধার ধারেননি ট্রাম্প।
রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা বলছেন, এটি ট্রাম্পের অসাংবিধানিক পদক্ষেপ। কঠোর সমালোচনা করেন ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারাও। যদিও রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন ট্রাম্পের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের অনুমতি নেয়া সময় সাপেক্ষ।
মার্কিন সংবিধানের অনুচ্ছেদ এক বলছে, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা বিশেষভাবে কংগ্রেসের হাতে। আর অনুচ্ছেদ দুই বলছে, প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন। সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর কংগ্রেসের সঙ্গে পরামর্শ না করে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ শুরুর ক্ষমতা সীমিত করা হয়। যদিও জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনটি ভিন্ন হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জানান, হামলার আগে কংগ্রেসের দুই পক্ষের নেতাদের ফোনে অবহিত করেছেন ট্রাম্প। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পকে অবশ্যই কংগ্রেসের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন ছিল।
লয়োলা মেরিমাউন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেসিকা লেভিনসন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সামরিক পদক্ষেপের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল। তবে এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। যা অসাংবিধানিক বা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার বাইরে নয়। তবে যদি যুদ্ধ এবং ভয়াবহ সংঘাতের সম্ভাবনা থাকে ঠিক ওই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট তার সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা রাখেন।’
আগের অনেক প্রেসিডেন্টও কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন দেশে হামলা চালিয়েছেন। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই লিবিয়ায় আক্রমণ করেন এবং ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার মিশন অনুমোদন করেন।
১৯৯০-এর দশকে বলকান অঞ্চলে হামলার অনুমতি দেন বিল ক্লিনটন। এ ছাড়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও প্রেসিডেন্সি ক্ষমতাবলে ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালান।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে আছে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে অবহিত করতে হয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেন, ‘ইরানে হামলার পর বিমানগুলো নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরিয়ে আনার পর কংগ্রেসকে অবহিত করা হয়।’