ভুতুড়ে হলেও সস্তা, জাপানে বাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ মধ্যবিত্তদের

আবাসন
বিদেশে এখন
0

আর্থিক সংকটে জর্জরিত জাপানিজদের জন্য আবাসন একটি বড় সমস্যা। উচ্চমূল্যের কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই বাড়ি কিনতে পারেন না। তাদের জন্য রয়েছে বড় সুযোগ। বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়ায় খুব সহজে বাড়ির মালিক হতে পারেন মধ্যবিত্ত জাপানিজরা। তবে এসব বাড়িতে বসবাস সহজ নয়। অনেকের ধারণা, অশরীরী ছায়া থাকে এই বাড়িগুলোতে।

বাড়ির মেঝে পরিষ্কার করছেন এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। প্রথম দেখায় স্বাভাবিক মনে হলেও মেঝেতে পড়ে থাকা তৈলাক্ত বস্তুগুলো মরদেহের অবশিষ্টাংশ। পরিবার পরিজনহীন বৃদ্ধ লোকটির মৃত্যুর ৬ মাস পর বিষয়টি টের পান প্রতিবেশিরা। এমন বাড়ি জাপানে পরিচিত জিকো বুক্কেন নামে। অপয়া বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় বাজারমূল্যের চেয়েও ২০ শতাংশ কম দামে পাওয়া যায় এসব বাড়ির মালিকানা।

হ্যাপি প্ল্যানিং রিয়েল স্টেট এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা আকিরা ওকুমা বলেন, ‘৬ মাস পর বৃদ্ধ লোকটির মারা যাবার সংবাদ পাওয়া যায়। মরদেহের অবশিষ্টাংশ মেঝেতেও পাওয়া যাবে। এরকম বাড়িগুলো আমরা ২০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করি। তবে তার আগে পুরো বাড়িই সংস্কার করে নতুন মালিকের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে।’

শিনটো ধর্মাবলম্বী অধিকাংশ জাপানিজের জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে ধারণার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রকৃতির সম্পর্ক। তাদের বিশ্বাস, অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার কোনো ব্যক্তির আত্মা ঘুরে বেড়ায় তার বাড়িতে। তাই ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষই সম্পত্তি বেচাকেনার আগে বাড়ি শুদ্ধিকরণের আশ্রয় নেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ডাকা হয় সন্ন্যাসী, অনেক সময় দেখা মিলে প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞদের।

জাপানের প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞ কাজুটোশি কোডামা বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থানে গবেষণা করি। ভিডিও, সাউন্ড, চৌম্বকীয় তরঙ্গ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ুচাপ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করি। এছাড়াও বাড়িতে অশরীরী বস্তুর উপস্থিতি শনাক্তে থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করি।’

জাপানের এনকু ওয়াতানাবে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বলেন, ‘অনেক সময় যারা একাকী ঘরে মারা যান, তাদের আত্মা বুঝতে চায় না যে তাদের শরীর ছেড়ে গেছে। এখানে উপস্থিত হয়ে আমি বুঝাই, স্বর্গে যাবার সময় হয়ে গেছে। যাতে করে পরবর্তী বাসিন্দা বাড়িতে শান্তিতে থাকতে পারে।’

বছরের প্রথম প্রান্তিকে জাপানের দেশজ উৎপাদন কমেছে দশমিক ২ শতাংশ। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফীতিও ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

টানা ১৪ বছর ধরে কমছে জন্মহার। বয়োবৃদ্ধের সংখ্যাও দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে এই বাড়িগুলোই অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত জাপানিজদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হয়ে ধরা দিয়েছে। পাশাপাশি বড় হচ্ছে বাড়ি শুদ্ধিকরণের ব্যবসা।

সেজু