রুশ ভূখণ্ডে পাল্টা হামলার জোরালো করার জন্য ইউক্রেনও সব দিক দিয়ে প্রস্তুত বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। শনিবার (১২ জুলাই) ৬ শতাধিক হামলার মধ্যে ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন ছাড়াও সাড়ে ৩শ'র বেশি রুশ হামলা প্রতিহতের দাবিও করেছেন জেলেনস্কি।
সামরিক শিল্প স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করে হামলা-পাল্টা হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন। শনিবার (১২ জুলাই) লাভিভ, খারকভসহ ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এছাড়াও সুমি, দোনেৎস্ক, ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনে তীব্র হচ্ছে লড়াই।
সব মিলিয়ে একদিনে ২৬টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৫৯৭টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে মস্কো। এরমধ্যে প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র, ৩৪০টি ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন ছাড়াও বেশিরভাগ ড্রোন প্রতিহতের দাবিও করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। হামলা প্রতিহত করলেও বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, গত রাতে রাশিয়ার হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। তাদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমার সমবেদনা। চেরনিভতসি, লাভিভ এবং খারকিভে আরও অনেকে আহত হয়েছেন। সকলকেই প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার কাজ চলছে।’
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র পাওয়ার পথ তৈরি হওয়ায় আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেছেন জেলেনস্কি। পাশাপাশি নিজেদের ড্রোন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও, রুশ ভূখণ্ডে পাল্টা হামলার জোরালো করার হুমকি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার উপায় নিশ্চিতে আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এছাড়া আমরা আমাদের নিজস্ব অস্ত্র উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি। বিশেষ করে ইন্টারসেপ্টর ড্রোন এবং পাল্টা হামলার জন্য ড্রোন উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। তারা হামলা বন্ধ না করলে, আমরাও রুশ ভূখণ্ডে ড্রোন অভিযান জোরালো করবো।’
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এবং ইউক্রেনের হুমকিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লড়াই সক্ষমতা বাড়াতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে তিনদিনে সফরে উত্তর কোরিয়া গিয়ে, সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী চোয়ে সন হুই ছাড়াও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। এসময়, আগে সেনা দিয়ে সহায়তা করায় উত্তর কোরিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘আমাদের কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় আপনাদের সেনারা রুশ সেনাদের সাথে মিলে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। নিজেদের জীবনের মূল্য দিয়ে হলেও ইউক্রেনের ভাড়াটেদের হাত থেকে অঞ্চলটি মুক্ত করতে বড় অবদান রেখেছিল। এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকের সময়, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারের বার্তা দেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। এ আওতায় ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়ার যে কোনো পদক্ষেপকে পিয়ংইয়ং নিঃশর্ত ভাবে সমর্থন দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন কিম জং উন।
এর মধ্য দিয়ে সম্প্রতি সামনে আসা ইউক্রেনের গোয়েন্দা তথ্য সত্য হওয়া সম্ভাবনা বাড়ছে। যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে, রাশিয়ায় নতুন করে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার সেনা পাঠাতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া সের্গেই ল্যাভরভের পিয়ংইং সফরের আগে রাশিয়া ঘোষণা দেয়, মস্কো-পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সপ্তাহে দুইদিন ফ্লাইট চালু করবে তারা। এতে যুদ্ধ উত্তেজনা আরও বেশি তীব্র হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।