গাজায় নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা, আহত শিশুদের নেয়া হচ্ছে আরব আমিরাতে

যুদ্ধবিধস্ত গাজা
বিদেশে এখন
0

জিম্মিদের মুক্তি এবং গ্রহণযোগ্য শর্তে গাজা যুদ্ধ শেষ করতে আলোচনা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে এখনো নিশ্চুপ ইসরাইল। গাজা সিটি দখলে নতুন যুদ্ধের শঙ্কায় আছেন বাসিন্দারা। জাতিসংঘ বলছে, গাজা সিটির অনাহারে থাকা শিশুরা মৃত্যুর মুখে পড়বে। এদিকে, আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের চিকিৎসার জন্য নেয়া হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরুর একদিন পরই ইসরাইলি বাহিনীর গুলি ও বোমা হামলা। গাজা-ইসরাইল সীমান্তে দেখা গেছে ধোঁয়ার বড় কুণ্ডলী। একদিকে ইসরাইলি সেনারা প্রবেশ করছে, অন্যদিকে জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে গাজা সিটির বাসিন্দারা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখেও গাজার বৃহত্তম নগরী দখলের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকার প্রায় ৭৫ শতাংশ এখন ইসরাইলিদের দখলে।

গেল সোমবার কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় নতুন একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সায় দেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ ফিরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তির শর্ত দেয়া হয়। তবে এই প্রস্তাবে এখনো সাড়া দেয়নি ইসরাইল।

এমন অবস্থায় জিম্মিদের মুক্ত করতে এবং গ্রহণযোগ্য শর্তে গাজা যুদ্ধ শেষ করতে সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় তিনি বলেন, হামাসকে পরাজিত ও সব জিম্মিকে মুক্ত করা দুটি কাজই একসঙ্গে চলবে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজা সিটি দখল এবং হামাসকে পরাজিত করার জন্য ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য। গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে রিজার্ভ সেনাদের নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্তে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। একই সঙ্গেও জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরাইলের কাছে উল্লেখযোগ্য শর্তে যুদ্ধের অবসানের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন:

এদিকে, নতুন যুদ্ধের আশঙ্কায় গাজা সিটির বাসিন্দারা। এরইমধ্যে সিটির ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে ইসরাইলি শত শত ট্যাঙ্ক।

গাজা সিটির বাসিন্দারা জানান, এ শহরে থেকে রাতভর ড্রোন ও রকেট হামলা, ক্ষুধা, যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই পায়নি কেউ। এখানের বাসিন্দাদের জীবন নিয়ে কেউ ভাবে না। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সবাই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছে।

তীব্র খাদ্য সংকট ও অনাহারে ভুগছে গাজার সিটির পরিবারগুলো। বেশিরভাগ শিশুই ভুগছে অপুষ্টিজনিত নানা রোগে। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ওষুধ। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, গাজা সিটিতে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা মারা যাবে। যেখানে গেল ৫ মাসে অনাহারে ও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬ গুণ।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরর্ণাথী সংস্থা কমিশনার ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘অনাহারে এবং অপুষ্টিতে ভোগা জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ নতুন করে ইসরিলইা বড় সামরিক অভিযানের মুখে পড়বে। গাজা উপত্যকা এখন পৃথিবীর নরকে হিসেবে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলি অভিযানে বাস্তুচ্যুত হবে বহু ফিলিস্তিনি। যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়ানক করে তুলবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গুরুতর আহত ও অসুস্থ ফিলিস্তিনি শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় তাদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাঁচার নতুন স্বপ্ন দেখছে ফিলিস্তিনি শিশুরা।

জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এবং হামাসের সঙ্গে চুক্তি করতে তেল আবিবে বিক্ষোভে নেমেছে হাজার হাজার ইসরাইলি। পরে তারা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর ঘেরাও করে। এ সময় নেতানিয়াহু সরকারের পদত্যাগের দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা।

ইএ