ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টায় বাধা দিচ্ছে ইউরোপ: দিমিত্রি পেসকভ

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ
বিদেশে এখন
0

ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টায় ইউরোপ বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। চীনের তিয়ানজিনে চলমান এসসিও সম্মেলনে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এবারের এসসিও সম্মেলনে যুদ্ধের বিষয়ে নিজেদের পক্ষে সমর্থন শক্তিশালী করার ওপর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে। এরমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইউক্রেনে বহুজাতিক সেনা মোতায়েনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন।

পুতিন-মোদিসহ ২০ দেশের সরকার প্রধান ও শীর্ষ কর্তারা এক হয়েছেন চীনের তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে। যেখানে সাইডলাইন আলোচনার প্রথমদিন রোববার থেকেই মার্কিন শুল্কনীতির বাইরেও গুরুত্ব পাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গ।

এসসিও সম্মেলনে গণমাধ্যমে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অভিযোগ করেন, ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টায় বাধা দিচ্ছে ইউরোপ। একইসঙ্গে কিয়েভ যতক্ষণ না শান্তির জন্য প্রস্তুত হওয়ার বাস্তব ইঙ্গিত দেবে; ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার অভিযান চলবে ।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধের মূল ধারা টিকিয়ে রেখেছে, তারা শান্ত হচ্ছে না। এটি আমাদের প্রেসিডেন্ট পুতিনের কৌশলের সম্পূর্ণ বিপরীত। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টাগুলোকেও বাধাগ্রস্ত করছে ইউরোপীয়রা। আমরা রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তুত। তবে কিয়েভের কাছ থেকে বাস্তব অর্থে কোনো ইঙ্গিত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের বিশেষ সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবো।’

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সফরের মধ্যদিয়ে শি-জিনপিংসহ অন্যান্য দেশের নেতাদেরও ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে সমর্থন শক্তিশালী করার ওপর জোর দিচ্ছেন পুতিন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধ বন্ধে মস্কোকে সর্বোচ্চ চাপ দেয়ার পথে এগোয়, সে-ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের অবস্থান বা প্রতিক্রিয়াও যাতে মস্কোর পক্ষে থাকে তা নিশ্চিত করতে চাইবেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরালোর অংশ হিসেবে সাংহাই সম্মেলন শেষে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বেইজিংয়ের একটি সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেয়ারও কথা রয়েছে পুতিনের। আর চীন-মার্কিন সম্পর্ক ২০১৮ সালের আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় মস্কোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছাড়া বেইজিং বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন:

রাশিয়া বারবার শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। সম্প্রতি ইউক্রেনের ভূমি দখলে আক্রমণের মাত্রা বাড়ানোয় ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা মনে করেন, আদতে শান্তি চাইছেন না পুতিন। বিশেষ করে এর জন্য বৃহস্পতিবার কিয়েভে থাকা ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেসামরিক অবকাঠামোতে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাকে দায়ী করা হচ্ছে। ফলে রাশিয়াকে থামাতে ঐক্যবদ্ধ বল প্রয়োগের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ইউরোপীয় নেতারা।

এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টেন মিশাল বলেন, ‘কেবল ঐক্যবদ্ধ বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাশিয়াকে থামানো যেতে পারে। কারণ ভদ্রতা তাদের কাছে দুর্বলতা। তাই তারা সেটাকে কাজে লাগাবে। তাই নিষেধাজ্ঞা ছাড়ও রাশিয়াকে রুখে দিতে, ঐক্য এবং ট্রান্সআটলান্টিক বন্ধনের সাথে ইউরোপ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। আমি বলতে চাই, ইউরোপ ছয় মাস কিংবা এক বছর আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন জানিয়েছেন, যুদ্ধ পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে ইউক্রেনে বহুজাতিক সেনা মোতায়েনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। এতে সহায়তা, নিয়ন্ত্রণ ও কমান্ড ব্যবস্থা, গোয়েন্দা ও নজরদারি সম্পদ সরবরাহসহ মার্কিন সমর্থন থাকবে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আশ্বস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট।

ইইউ প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা অবস্থানকে শক্তিশালী করব। এর জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদী নতুন ইউরোপীয় বাজেট যা কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে। যেখানে আমরা প্রতিরক্ষার উপর জোর দিয়েছি। আমরা প্রস্তাবে প্রতিরক্ষা বিনিয়োগ ৫ গুণ বৃদ্ধি করছি এবং সামরিক গতিশীলতা ১০গুণ বৃদ্ধি করছি।’

এদিকে রোববার রাতভর রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৬০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি দখল অভিযানের অংশ হিসেবে রাতে হামলার মাত্রা বাড়ানোয় প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গিকার করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এতে করে যুদ্ধ বন্ধের চেয়ে উত্তেজনার পারদ আরও বাড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।

ইএ