চলতি মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার অঙ্গীকার করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, মাল্টা, বেলজিয়ামসহ পশ্চিমা অনেক দেশ। বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর এমন ঘোষণায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে ইসরাইল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও এ ধরনের উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়া, দ্বিরাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপকেও উপেক্ষা করে যাচ্ছে ইসরাইল।
আন্তর্জাতিক মহলের বিরোধিতার মুখেও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ স্থাপনকারী অংশের কাছেই ই-ওয়ান প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ইসরাইল। ১২ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ জায়গাটি দখল করলে কার্যত পশ্চিম তীর দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। যার একটি ভাগ স্থায়ীভাবে ইসরাইলের দখলে চলে যাবে।
সংবেদনশীল এ ভূখণ্ডে এরইমধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে বড় আকারে বসতি সম্প্রসারণে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি জানান, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বলতে কিছু থাকবে না। এটি ইসরাইলিদের নিজস্ব ভূখণ্ড বলেও দাবি করেন তিনি।
ইসরাইলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন এ অঞ্চলের শান্তির চাবিকাঠি। জাতিসংঘের ১৪৯টি সদস্য রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে, কাতারের দোহায় ইসরাইলি হামলা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৫ সদস্যের সবাই চলমান উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এ সময় ইসরাইলি হামলা নিন্দা জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধি।
জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিনিধি ডরোথি শিয়া বলেন, ‘কাতারের অভ্যন্তরে একতরফা বোমা হামলা নিন্দনীয় কাজ। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে কাতার শান্তির প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করছে এবং ঝুঁকি নিয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ধরনের হামলায় ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থই উদ্ধার হবে না। এভাবে জিম্মিদের মুক্তি করার ব্যবস্থা গ্রহণ অনুচিত।’
তিন ঘণ্টার জরুরি অধিবেশনে অংশ নিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানবিক ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে দোহা। নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন সহ্য করবে না তার দেশ।
আরও পড়ুন:
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি বলেন, ‘কাতার মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে বিশ্বাস রাখে। কাতারের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। তবে ইসরাইল শান্তি প্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগকে স্থায়ী করছে। আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। যারা ধ্বংসের ডাক দেয় তাদের বর্জন করবে কাতার।’
হামাস বলছে তারা তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবে না। এ সময় ইসরাইলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ নিতে কাতারের প্রতি আহ্বান জানান হামাস নেতা ফৌজি বারহুম।
হামাস নেতা ফৌজি বারহুম বলেন, ‘ইসরাইলের জন্য এ জঘন্য অপরাধ মেনে নেয়া হবে না। ফিলিস্তিনিদের স্পষ্ট দাবিগুলোকে তারা কখনো পরিবর্তন করতে পারবে না। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ, গাজা থেকে দখলদার সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করলেই একটি প্রকৃত বন্দি বিনিময় হতে পারে।’
এদিকে, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ইসরাইলি হামলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জাতীয় জাদুঘরে। এতে ধ্বংস হয়ে গেছে জাদুঘরের সংরক্ষিত বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তবে ইসরাইলের দাবি, হুথি গোষ্ঠীর সামরিক স্থাপনা ও প্রচার বিভাগ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা।
২০২৬ সালে অস্ট্রিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় ইসরাইল অংশ নিলে আয়োজন থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে আয়ারল্যান্ড। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত জানায় ইউরোপের এই দেশটি। ১৯৬৫ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাতবার পুরস্কার জিতেছে আয়ারল্যান্ড।