যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরপরই গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানো হয়েছে: ট্রাম্প

শান্তি সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা চুক্তির ডকুমেন্টস দেখিয়েছেন
বিদেশে এখন
0

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এখন গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের সময়। মিশরের শান্তি সম্মেলনে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্মেলনে দেয়া ভাষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরপরই গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানো হয়েছে।’ এদিকে শান্তিচুক্তি কার্যকরে ভূমিকা রাখায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রশংসা করছেন বিশ্বনেতারা।

চোখের পানিতে ভেসে যাচ্ছে মায়ের মুখ। পরম স্নেহে সন্তানকে আঁকড়ে ধরে আছেন পিতা। ভাইকে আলিঙ্গন করে কান্না ধরে রাখতে পারছে না ভাই। বাসের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে স্বজনের হাত স্পর্শ করছেন কেউ কেউ।

এ দৃশ্যগুলো গাজার খান ইউনিসের। বন্দি দশা থেকে মুক্ত হয়ে এভাবেই আবেগে ভেসে গেছেন হতভাগ্য ফিলিস্তিনিরা। গেলো সোমবার বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত আড়াইশো বন্দিসহ ২০২৩ এর অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু পর আটক প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। প্রায় দুই বছর পেয়ে স্বজনদের ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত পরিবারের সদস্যারা।

একই দিনে জীবিত ২০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হস্তান্তর করা হয়েছে নিহত কয়েক জিম্মির মরদেহও।

এদিকে ফিলিস্তিনে যখন পরিবারের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন মুক্তি পাওয়া বন্দিরা, তখন মিশরে শারম আল শেখ শহরে জড়ো হয়ে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার সমাধান সূত্র খুঁজেছেন বিশ্বনেতারা। স্বাক্ষর করেছেন গাজা শান্তি চুক্তির নথিতেও।

যদিও মিশরের এই শান্তি সম্মেলনে সবার নজর ছিল অনুষ্ঠানের কো-চেয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাগত বক্তব্যে। এ দিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন গাজা চুক্তির মাধ্যমে আবারও শান্তি ফিরবে মধ্যপ্রাচ্যে। আশ্বস্ত করেন এই চুক্তির ফলে গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের পথ আরও সুগম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘গাজা যুদ্ধের অবসান হয়েছে। এই বিশেষ উপলক্ষ্যে উদযাপন করতেই আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। আজ একটি নতুন দিনের সূচনা হলো। শান্তি ফিরলো মধ্যপ্রাচ্যে। এ মুহূর্ত থেকে আমরা গাজা পুনর্গঠনে মনোযোগ দিতে চাই। অঞ্চলটিকে আরও শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও উন্নত করতে কাজ করবো। আমরা চাই, এখন থেকে সন্ত্রাসবাদের পুরোপুরি অবসান হবে।’

গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ ও তৎপরতার প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিশরের সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বনেতারা। ট্রাম্পকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।

মিশরের এই শান্তি সম্মেলন গাজার সংকট সমাধানে অন্যতম প্রধান মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ মনে করেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পদক্ষেপ নিয়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন ট্রাম্প।

শেহবাজ শরীফ বলেন, ‘মিশরের এই সম্মেলন ও গাজা শান্তি চুক্তি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি। গাজায় সরবরাহের জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার টন খাবার মজুত করেছে তারা। পাশাপাশি, জাতিসংঘের উদ্যোগে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত উপত্যকায়।’

এদিকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনলেও নিজ দেশ এখনও চাপে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার কট্টর ডানপন্থি নেতাদের অনেকেই চাননি গাজায় অভিযান বন্ধ করুক ইসরাইল। আবার যুদ্ধের কারণে বারবার পিছিয়ে যাওয়া দুর্নীতির মামলা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে নেতানিয়াহুকে।

যদিও এসব মামলা থেকে নেতানিয়াহুকে নিষ্কৃতি দিতে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে অনুরোধ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকরা একে স্বাগত জানালেও, সমালোচকদের দাবি, এতে করে প্রশ্নবিদ্ধ হবে দেশটির বিচারব্যবস্থা।

এসএইচ