‘পাকিস্তানে হামলা মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা’

ভারতের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ
এশিয়া
বিদেশে এখন
0

পেহেলগামে পর্যটক হত্যার জেরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের হামলাকে ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে, তখন এ ধরনের হামলা অপ্রত্যাশিত। বিশ্লেষকদের দাবি, নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘাত একসময় স্তিমিত হয়ে আসলেও, এর জেরে দুই দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির দায় এড়াতে পারে না কোনো পক্ষ।

২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, দেশটির গণমাধ্যম ও জনগণের আচরণ ও প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছিলো, পাকিস্তানে প্রতিশোধমূলক একটি হামলার জন্য মুখিয়ে আছে মোদি প্রশাসন।

সে আশঙ্কা সত্য হয়েছে দুই সপ্তাহের ব্যবধানেই। বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ২৫ মিনিটে অন্তত ২৪ বার হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। হতাহতের সংখ্যা ও পরিচয় নিয়ে দুই দেশ আলাদা আলাদা তথ্য দিলেও সাম্প্রতিক যে কোনো হামলার চেয়ে অপারেশন সিন্দুরের গুরুত্ব ও ভয়াবহতা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিক সমাধানের তোয়াক্কা না করে ভারত অবিবেচকের মতো আচরণ করেছে। এ ধরনের আচরণ ভারতের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, একসময় এই বৈরিতা শেষ হবে। কিন্তু হামলা-পাল্টা হামলায় দু'দেশের সাধারণ মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে তা অপূরণীয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা বলেন, ‘এটা বলা যায় কূটনৈতিক পরাজয়। কারণ এ সময়ে, এ যুগে এসে এরকম দুটি রাষ্ট্র যাদের নিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে, তারা জানান দিয়েই কিন্তু যুদ্ধ শুরু করলো। এটা ভারতের জন্য কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবেই ইতিহাসে গণ্য হবে।’

ভারতের এই হামলার বিষয়ে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, তথ্যের অপপ্রচার ও অপব্যবহারের সাথে যোগ হয়েছে প্রোপাগান্ডাও। এসব কারণে চলমান বৈরিতা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভূখণ্ডে চালানো এই হামলা বা অভিযানের নাম দিয়েছেন সিন্দুর। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্মীয় চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করে নামকরণ ভাবিয়ে তুলছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের জনগণের আশঙ্কা এবারের যুদ্ধ আগের যে কোনো যুদ্ধের চেয়ে ভয়ংকর হবে।

ই-সাউথ এশিয়ার সম্পাদক মাসকাওয়াথ আহসান বলেন, ‘যে ইতিহাস তাতে দুজনেরই একটি যুদ্ধাংদেহী মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ মানুষ খুবই আতঙ্কিত এবং তারা মনে করছে, যেহেতু ভারতের অপারেশনের নাম “অপারেশন সিন্দুর”। এবং এরকম একটি ধর্মীয় চিহ্নের বা প্রতীকের ব্যবহার হয়েছে তাতে করে এবারের যুদ্ধটা আগের যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে কি না এটি চিন্তার বিষয়।’

তবে শেষ পর্যন্ত এই সংঘাতের পরিণতি কি হতে যাচ্ছে তা নির্ভর করছে পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায় কি না তার ওপর।

এসএস