যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই জয়ের দাবি করছে। ভারতের বিরুদ্ধে জয় হয়েছে, এই খুশিতে পুরো পাকিস্তানে যেন বিজয় উৎসব। ভারতের অপারেশন সিন্দুরের জবাবে পাকিস্তানের অপারেশন বুনিয়ান আল মারসুসকে ঐতিহাসিক সফলতা হিসেবে দেখছেন দেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় আর সামাজিক নানা সংগঠন। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে লাহোর আর ইসলামাবাদে আয়োজিত হয়েছে বিজয় র্যালি 'ডিফেন্স পাকিস্তান'।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘পেহেলগামের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে পারেনি ভারত। নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতা। নিজেরা ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানকে হুমকি দিয়েছে। আমরা জবাব দিয়েছি।’
করাচিতে 'ইউম ই তাশাক্কুর' বা ধন্যবাদের দিন নামে র্যালির আয়োজন করে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ। দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয় র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা। নানা ইস্যুতে কটাক্ষ করা হয় ভারতকে। অনেকের হাতে দেখা যায় নরেন্দ্র মোদি আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিকৃত ছবি। সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের ভূমিকার উচ্চ প্রশংসা করেন নেতাকর্মীরা।
পিএমএল-এনের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উসমানী বলেন, ‘আমরা ধন্যবাদের দিন উদযাপন করছি। কারণ পৃথিবী দেখেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শক্তি। মাত্র একদিনে আমরা ভারতকে জবাব দিয়েছি। তারা এখন ভয় পাচ্ছে। আমাদের জবাব জরুরি ছিল। বিশ্বে অন্যতম সেনাবাহিনীগুলোর একটি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। ভারত একই ভুল আবার করলে পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দি ইমরান খানের দল পিটিআই'এর নেতাকর্মীরা করাচিতে আয়োজন করে বিজয় র্যালি 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ'। র্যালিতে তাদের শীর্ষ নেতার মুক্তির দাবি করেন। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে আয়োজিত র্যালিতে অংশ নেয় পাকিস্তান পিপলস পার্টি। প্রশংসা করা হয় দলের চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির। করাচিসহ বিভিন্ন শহরে র্যালিতে অংশ নেয় মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা। কঠিন থেকে কঠিন সময়ে পাকিস্তানের মাথা উঁচু করেছি আমরা। এখন র্যালির আয়োজন করেছি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সম্মান জানাতে।’
অন্য একজন বলেন, ‘ভারত পিছিয়ে গেছে। কারণ উচিত জবাব পেয়েছে। অন্যকে অসম্মান করা কেউ উচিত জবাব না পেলে বোঝে না। দুর্বলতা দেখালেই সুযোগ নেয়া আর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।’
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরেও বিজয় র্যালি হয়েছে। সীমান্ত শহর ছাকোঠিতেও বিজয় র্যালিতে অংশ নেন বিপুল মানুষ। আজাদ কাশ্মীরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজা মুহাম্মদ ফারুক হায়দার খানকে দেখা যায়, ফুল দিয়ে সেনাবাহিনীকে অভ্যর্থনা জানাতে।
আজাদ কাশ্মীরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজা মুহাম্মদ ফারুক হায়দার খান বলেন, ‘বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনী, আর্টিলারি, মিসাইল এমনকি রকেট বাহিনী। সবাই সফলতার সঙ্গে ভারতের উদ্দেশ্য ভেস্তে দিয়েছে। প্রতিপক্ষ নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে।’
গেলো প্রায় তিন দশকে প্রথমবারের মতো এমন বড় সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ। জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটক হত্যাকে কেন্দ্র করে চার দিনের সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় দুই দেশ।