হিমালয়ঘেঁষা ভারতের উত্তরাঞ্চলে বর্ষার তাণ্ডব নতুন না হলেও প্রতি বছর যেন আগের চেয়েও আরও বেশি বিধ্বংসী রূপ দেখায় প্রকৃতি।
টানা ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, আকস্মিক ভূমিধস আর বন্যায় দুই সপ্তাহ ধরে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশের জনজীবন। নিখোঁজ আর হতাহতের সংখ্যা এরইমধ্যে ২০০ ছাড়িয়েছে। চলছে উদ্ধার অভিযান আর ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম।
সমন্বিতভাবে কাজ করেও জনদুর্ভোগ কমাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনী। বৃষ্টি আরও বাড়বে বলে শনিবার থেকে পরবর্তী তিনদিন রাজ্যজুড়ে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হিমাচলজুড়ে আড়াইশ’ সড়কে বন্ধ যান চলাচল; অচল হয়ে পড়ে আছে ৫শ’র বেশি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার, ক্ষতিগ্রস্ত আড়াইশ’র বেশি বাড়িঘর ও স্থাপনা, ১৪টি সেতু আর ৭শ’র বেশি পানি প্রকল্প। প্রাদেশিক রাজধানী শিমলা, কুল্লু, মানালিতে সীমা ছাড়িয়েছে ভোগান্তি। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মান্ডি জেলা। বর্ষা শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহেই রাজ্যটিতে আর্থিক ক্ষতি কয়েকশ' কোটি রূপি বলে জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
ভারতের হিমাচল প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব মুখপাত্র ডিসি রানা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি রুপির ক্ষতির যে অঙ্ক উঠে এসেছে, সেটি আমাদের খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অঙ্কটা আরও বড়। আর এই মুহূর্তে ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রমের ওপর পুরো নজর। তাই ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণে সময় লাগবে।’
চলতি বর্ষায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভারী বৃষ্টি, ভূমিধস আর বন্যা সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ। উত্তরাখন্ডে বর্ষার দাপটে এখনও বন্ধ চারধাম যাত্রা, বিশেষ করে কেদারনাথের পথ। বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের কোনকান অঞ্চলে অরেঞ্জ অ্যালার্ট; আর আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুনের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। এছাড়াও, ওড়িষার বালাসোরে পানিবন্দি অর্ধশতাধিক গ্রাম, তলিয়ে গেছে সড়ক ও কৃষিজমি। অতিবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিধসের জেরে রাজ্যগুলোতে চলছে দুর্যোগকবলিত মানুষকে সরিয়ে নেয়া ও ত্রাণ সরবরাহের কাজ।
আগামী দুতিনদিন অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, বিহার, সিকিম আর পশ্চিমবঙ্গে। ঝাড়খন্ডের দক্ষিণে সৃষ্ট ঘূর্ণির প্রভাবে বৃষ্টির কবলে পুরো অঞ্চল। মেঘালয়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ আর নাগাল্যান্ডসহ উত্তরপূর্ব; দক্ষিণে কেরালা, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু আর অন্ধ্র প্রদেশে, বিশেষ করে উপকূলের নিম্নাঞ্চলগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীরেও ভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। উত্তর ও পূর্ব ভারতের উপর সক্রিয় মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, মধ্য ও পূর্ব ভারতের কিছু অংশে বাতাসের ঘূর্ণি এবং পশ্চিম উপকূল ও উপদ্বীপ অঞ্চলে মৌসুমি বাতাসের শক্তি বৃদ্ধির ফলে বর্ষার এমন বিরূপ খেয়ালের কবলে ভারত, এমনটাই বলছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।