রেকর্ড বরাদ্দ সত্ত্বেও প্রাণহানি রুখতে ব্যর্থ পাকিস্তানের দুর্যোগ কর্তৃপক্ষ

পাকিস্তানের বন্যা
এশিয়া
বিদেশে এখন
0

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দের পরও এবারের বন্যায় পাকিস্তানে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৭০০ এর ঘরে। শুধু বুনের জেলাতেই জীবিকা হারিয়েছেন ৬০ শতাংশ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের বন্যা থেকে শিক্ষা নেয়া হয়নি বলে মনে করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। বন্যা প্রবণ এলাকার পাশে নির্মাণকাজ বন্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের সরকারপ্রধান।

২৫ বছর বয়সী পাকিস্তানি যুবক নূর মোহাম্মাদ। মালয়েশিয়া থেকে নিজ দেশে ফিরেই বিয়ের পিড়িতে বসার কথা ছিলো তার। তবে বিয়েবাড়িতে এখন শোকের মাতম। কারণ গেলো সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যায় নিজ পরিবারের ২৪ সদস্যকে হারিয়েছেন এ যুবক। সান্ত্বনা হিসেবে পরিবার বিয়োগকে এখন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা হিসেবেই মনে করছেন নূর।

তিনি বলেন, ‘আর কী বা বলবো। এটা আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে।’

পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া। গেলো সপ্তাহে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় প্রদেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪০০ মানুষ। যার মধ্যে শুধু বুনের জেলায় প্রাণহানি দুই শতাধিক। মানবিক সহায়তা সংস্থা ইসলামিক রিলিফের প্রতিবেদন বলছে, বন্যার কারণে প্রত্যন্ত জেলাটির ৬০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছেন। কৃষিক্ষেত নষ্টের পরিমাণ ৮০ শতাংশ। আর জেলার অর্ধেক গবাদি পশু বানের তোড়ে ভেসে গেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জন্য বরাদ্দ করা হয় প্রায় ৩০ হাজার কোটি রুপি। বিপুল অর্থ বরাদ্দ কোনো কাজে আসেনি, তা প্রমাণ হয়েছে এবারের বন্যায়। অডিটর জেনারেলের নিরীক্ষায় উঠে এসেছে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট মাত্র ১৬ শতাংশ পাকিস্তানি।

ক্ষোভ ফুঁটে উঠেছে শেহবাজ শরীফের কণ্ঠেও। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা থেকে এখনও শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তাই এবারের বন্যা এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বন্যা প্রবণ এলাকার পাশে নির্মাণকাজ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

যদিও আবারও বন্যায় শঙ্কায় দিন পার করছেন পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভারি বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের পূর্বাভাস দিয়েছে পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তর।

এনডিএমএর ঝুঁকি নিরূপণ কর্মকর্তা সাইদ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ বলেন, ‘এবছর মেঘের উচ্চতা ভূমি থেকে অনেকটাই কম। একে আমরা কুমোলোনিম্বাস মেঘ বলি। সাধারণত এ মেঘের কারণে পাহাড়ি অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হয়। এ কারণে ঘনঘন মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে।’

দক্ষিণ পাঞ্জাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বন্যা। সিন্ধু ও চেনাব নদীর উচ্চতা বাড়ায় তারবেলা বাঁধ ১০০ শতাংশ বেশি পানি ধারণ করছে। মাঙ্গলা বাঁধে পানির উচ্চতা ছাড়িয়েছে ৭০ শতাংশ। নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

এসএস