একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা, অন্যদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে বিরল খনিজ চুক্তি। এর মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আবার নতুন নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা, এসব মিলিয়ে বেশ টালমাটাল পরিস্থিতিতে আছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ।
রয়টার্সের কয়েকটি সূত্র বলছে, রাশিয়ার ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং আর জ্বালানি খাত। লক্ষ্য, ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপে ফেলা। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকতে পারে রুশ জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম।
গেলো বুধবার ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরল খনিজের যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তার ফলশ্রুতিতে ইউক্রেনের খনিজ আর প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের লাইসেন্স পেয়েছে ওয়াশিংটন। বিনিময়ে কিয়েভ পাবে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা, যা দিয়ে যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেশ গঠন করবে ইউক্রেন। এমন সময় নিষেধাজ্ঞার ইস্যু পুরো মধ্যস্থতায় যোগ করছে নতুন মাত্রা। প্রাকৃতিক সম্পদের এই চুক্তি নিয়ে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ভোট হবে আগামী ৮ মে।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির আওতায় আর্থিক সহায়তা আর সামরিক সহায়তা দেবে। যেমন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। ইউক্রেনের অংশগ্রহণ থাকবে ৫০ শতাংশ, লাইসেন্স থেকে শুরু করে জ্বালানি তেল, গ্যাস আর বিরল খনিজ উত্তোলনে। এই প্রকল্পগুলো থেকে যে মুনাফা হবে, তা সহায়তার হিসেবের বাইরে। এটা রাজস্ব। ইউক্রেনের সংবিধানবিরোধী কোনো চুক্তি হয়নি। উভয়পক্ষ লাভবান হয়, এমন চুক্তিই করা হয়েছে।’
এমন অবস্থায় ইউক্রেনের খারকিভে নতুন করে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেছে। কোন টার্গেট এখন আর সামরিক টার্গেট নেই, সবকিছুই টার্গেটে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার দুই পক্ষই সম্মুখসারিতে জড়িয়েছে সংঘাতে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের সমরাস্ত্রের ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। ভূপাতিত করা হয়েছে এক হাজারের বেশি ড্রোন। সম্মুখসারিতে যুদ্ধের পাশাপাশি হামলা হয়েছে খেরসন আর জাপোরিঝিয়াতেও।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটশকো বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে হয়তো ইউক্রেনকে দেশের মাটি উৎসর্গ করতে হবে। এরপর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মনে করেন, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে রাশিয়ার দখল করা ভূমি ইউক্রেন আর ফিরে পাবে না। যদিও ইউক্রেনীয়ানরা কোনোদিনই চান না যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে দেশের ভূখণ্ড উৎসর্গ করতে। অনেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতিতে কোনো ভরসা পাচ্ছেন না।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে আমাদের কিছু দিতে হবে। ইউক্রেনের মানুষ জীবন দিচ্ছে, প্রাকৃতিক সম্পদ দিচ্ছে। মনে হচ্ছে ইউক্রেনকে সবাই ধর্ষণ করছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘সবাই মুনাফার কথা ভাবছে। ইউক্রেন খনিজের ভাণ্ডার। এই চুক্তিও লাভের জন্যই হয়েছে। কেউ আমাদের নিয়ে চিন্তিত না। এই চুক্তি আমাদের জন্য ভালো কিছু আনবে না।’
ইউক্রেনের একজন বলেন, ‘এতে করে বোঝা যাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের কথা রাখে কিনা। কিংবা আদৌ তাকে বিশ্বাস করা যায় কি না। শুধু ইউক্রেনীয়রা না, বড় প্রশ্ন মার্কিনরাও তাকে বিশ্বাস করতে পারে কি না।’
বিরল খনিজের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র দেবে সামরিক সহায়তা, যা দেশের সেনাবাহিনীর একান্ত প্রয়োজন। যে কারণে বিরল খনিজের বিনিময়ে হলেও অনেক ইউক্রেনীয় আবার যেকোনো মূল্যেই এই যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে। যদিও রাশিয়া ঠিক যুদ্ধ বন্ধ করতে কতটা আগ্রহী, এখনও মেলেনি সেই নিশ্চয়তা।