শ্বেতশুভ্র থেকে প্রকৃতি ধারণ করেছে হালকা গোলাপি আর গাঢ় বেগুনি রং। প্রতি বছরের মে মাসে রাশিয়ার স্থানীয় মাসকোভাইটস জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের পর্যটকরা বিশেষ এই লাইলাক ফুল দেখতে ভিড় জমান রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে। চলতি মৌসুমে মস্কোজুড়ে ফুটেছে বিভিন্ন রং আর আকারের লাইলাক। মাস্কোভাইটস জনগোষ্ঠীর কাছে জাপানের সাকুরা মৌসুমের মতোই পরিচিত লাইলাকের এই মৌসুম।
পর্যটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রথমবার লাইলাক বাগানে এসেছি। এত অসাধারণ লাগছে। শুধু যে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য, তা নয়, সঙ্গে হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়া সুঘ্রাণও আছে। প্রতিটা লাইলাকের সুগন্ধ আলাদা। কোনটা বেশি উজ্জ্বল, কোনটার রং গাঢ়। শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।’
গোটা মস্কোতেই এই ফুল বিস্তৃতি লাভ থাকলেও, লাইলাক গার্ডেন অবস্থিত মস্কোর উত্তর – পূর্বাঞ্চলে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জনপ্রিয় ফুলচাষি লিওনিড কোলেসনিকভের শখের বসে রোপণ করা ফুলের চারা থেকেই আজকের এই দৃষ্টিনন্দন বাগান।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘রাশিয়াতে লাইলাক ফুল গ্রামের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। রুশ সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে। মানুষ বাড়ির সামনে এই ফুল গাছ লাগায়। বহু বছর ধরে এই ফুল ফুটছে। আমরা সুঘ্রাণ নিতে পারছি। হৃদয় এখানে বসন্তের স্বাদ খুঁজে পায়।’
১৮৯৩ সালে ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেয়া কোলেসনিকভ কৃষিকাজের জন্য তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে লাইলাকই ছিল তার শখের জায়গা। রুশ বিপ্লবের পর ১৯১৭ সালে কোলেসনিকভ পরিবারসহ পুরো সম্পত্তি হারায়। কিন্তু লাইলাকের প্রতি আগ্রহ হারাননি একটুও। তখন থেকেই ভিন্ন ধরনের লাইলাক চাষ শুরু করেন তিনি। পুরো জীবদ্দশায় নতুন ধরনের ৩০০ প্রজাতির লাইলাক প্রকৃতিকে উপহার দেন তিনি। এরমধ্যে অনেক ধরনের লাইলাক এখনও বাগানে ফোটে। যেগুলো ৭০ বছরেরও পুরনো প্রজাতি।
রাশিয়ার একজন বলেন, ‘আপনি রাশিয়ান সাকুরা বলতে পারবেন না। আপনাকে লাইলাকই বলতে হবে। সাকুরা জাপানে ফোটে, আমাদের দেশে ফোটে লাইলাক। কোথাও এর নাম ম্যাগনোলিয়া। পর্যটকদের জন্য এই অভিজ্ঞতা কখনই ভোলার না। কোলেসনিকভ সত্যি কিংবদন্তি। মাতৃভূমির গর্ব।’
কোলেসনিকভের চাষ করা ভিন্ন প্রজাতির লাইলাক পুরো বিশ্বে সমাদৃত। যুক্তরাজ্যের বাকিংহাম প্যালেস, কানাডার রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন, যুক্তরাষ্ট্রের হোল্ডেন আরবোরেটাম ও আর্নল্ড আরবোটেরামেও দেখা মেলে এই ফুল।
১৯৬৮ সালে কোলিসনিকভের মৃত্যুর পর লাইলাক গার্ডেন বহু বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। অসাধারণ কিছু প্রজাতিও সেখানে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তার স্মৃতি ধরে রাখতে বিলুপ্ত প্রজাতিগুলো আবারও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মস্কোর লাইলাক গার্ডেনে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ প্রজাতির ফুল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। পুরো দেশেই চলছে হারিয়ে যাওয়া প্রজাতিগুলোর খোঁজ। মস্কো ফ্লোরিস্টস ক্লাব বলছে, হারিয়ে যাওয়া বাকি ২৫০ প্রজাতির ফুল উদ্ধারেও সক্ষম হবে তারা।