কখনো কখনো যুদ্ধ করেই সমস্যার সমাধান করতে হয়: ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলি আক্রমণে গতকাল (রোববার, ১৫ জুন) ইরানের গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি ছাড়াও দুই জেনারেল নিহত পর আজ (সোমবার, ১৬ জুন) পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে ইরান। তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরাইলের দখলকৃত অন্তত চারটি এলাকায় ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তেহরান। এমনকি প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চায় না বলেও সাফ জানিয়েছে ইরান। এদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, তাদের আক্রমণ ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে। আর ট্রাম্প বলেছেন, কখনও কখনও যুদ্ধ করেই সমস্যার সমাধান করতে হয়।

চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে ইরান-ইসরাইল সংঘাত। ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে তেহরান। রোববার বন্দর নগরী হাইফার পর সোমবার রাত থেকে তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান। নজিরবিহীন এসব হামলায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকায় টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছে ইসরাইল। পুরো ইসরাইলে জারি রয়েছে সতর্কতা।

খোদ ইসরাইলের সেনাপ্রধানও স্বীকার করছেন, ইরানে চালানো হামলার জন্য যে এভাবে মূল্য দিতে হবে তা আগেই জানা ছিল তাদের। এ অবস্থায় জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। হুমকি দিয়েছে আক্রমণ আরও জোরালো করার।

ইসরাইলের সেনাবাহিনীর প্রধান আইয়াল জামির বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিযান আরও তীব্র করে তুলব এবং নিরাপত্তা জোরদার করব। সঠিক পদক্ষেপই পারে মানুষের জীবনের ঝুঁকি কমাতে। তাই সাধারণ মানুষকে বলবো, আমাদের দেয়া প্রতিরক্ষামূলক নির্দেশনা অনুসরণ করে চলুন।’

সংঘাতের সময় নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চল এবং ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছেড়ে যেতে সাধারণ ইসরায়েলিদের সতর্ক করেছে ইরান।

ইরানের সামরিক মুখপাত্র রেজা সায়্যাদ বলেন, ‘ভবিষ্যৎ দিনগুলোর জন্য সাধারণ ইসরাইলিদের আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে রাখছি। আপনাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছাড়ুন। কারণ ভবিষ্যতে অধিকৃত অঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।’

এদিকে ইরানে চালানো ইসরাইলি আক্রমণেও বাড়ছে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি। রোববারের হামলায় আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি ছাড়াও দুই জেনারেল নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।

এমন তীব্র সংঘাত উত্তেজনার মধ্যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে। ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘অবশ্যই এটি ঘটবে, কারণ ইরানের শাসনব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ৮০ শতাংশ জনগণও তাদের তাড়িয়ে দেব। এছাড়া পারস্যের জনগণ এবং ইহুদি জনগণের মধ্যে একসময় বন্ধুত্ব ছিল। এটি সাইরাস দ্য গ্রেটের সময় থেকে ছিল, যা আবারও জেগে উঠতে পারে।’

সংঘাত উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ভূমিকা নিচ্ছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কখনও কখনও যুদ্ধ করেই সমস্যার সমাধান করতে হয়। তবে ইরান-ইসরাইল চুক্তিতে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশা করি একটি চুক্তি হবে। আমার মনে হয় এটিই চুক্তির সময়। কিন্তু সমস্যার সমাধানে কখনও কখনও লড়াই করতে হয়, তবে আমরা দেখব এটি কোন দিকে যায়।’

এদিকে আক্রমণের পূর্ণ প্রতিশোধ নেয়ার আগ পর্যন্ত ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা করতে চায় না বলে মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান এবং কাতারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইরান। গত শুক্রবার (১৩ জুন)থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ইরানে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৪, আহত ১২ শতাধিক। এছাড়া ইরানের হামলায় ইসরাইলে নিহত কমপক্ষে ১৭, আহত সাড়ে তিন শাতাধিক।

এসএস