ভোরের আলো ফুটতেই তেল আবিবসহ ইসরাইলের বেশ কয়েকটি শহরে বেজে ওঠে সতর্কতামূলক সাইরেন। বন্দর নগরী হাইফা এবং মধ্য ও ইসরাইলের উত্তারঞ্চলে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেনের সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গেছে। ইরানের বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার দাবি করেছে ইসরাইল। এছাড়া, ইরানের বিপ্লবী গার্ডের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার আলী শাদমানিকে হত্যার দাবি করেছে তেল আবিব। তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা গেছে।
জবাবে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরাইল। নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার কাছে একটি ইসরাইলি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে তেহরান। এছাড়া, নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের সময়সীমা বাড়িয়েছে ইরান।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশনে ইসরাইলি হামলাকে কাপুরুষতার সর্বোচ্চ পর্যায় বলে অভিহিত করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। প্রতিবাদে ইসরাইলে ইতিহাসে ভয়াবহতম আক্রমণ চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। সোমবারের হামলায় প্রাণ হারান টেলিভিশনটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পর ইসরাইলি হামলার কেন্দ্রবিন্দু এখন রাজাধানী তেহরান। আর তাই, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক বাহিনীর নির্দেশনার পর তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছাড়তে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলমান সংঘাতের মধ্যেই জি সেভেন সম্মেলন থেকে তড়িঘরি করে দেশে ফেরার পর ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে তেহরানের বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেন তিনি। বলেন, এই মুহূর্তে বাসিন্দাদের উচিত দ্রুত তেহরান ত্যাগ করা উচিত। যদিও এর পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেননি ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পরপরই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন তেহরানের সাধারণ মানুষ। সড়কে দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। শহরটিতে প্রায় এক কোটি বাসিন্দার বসবাস।
এদিকে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমা ব্যবহারের কথা ভাবছে ওয়াশিংটন। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনে কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তবে জি সেভেন সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি করে ফিরে আসার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কোন সম্পর্ক নেই বলে নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এমন পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের চলমান সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশ্বনেতারা। জি-সেভেন সম্মেলনে যৌথ বিবৃতিতে নেতারা আবারও উচ্চারণ করেন, ইরানের কাছে কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ইরানে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা আরও বিপদ ডেকে আনবে।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস একটি দেশের সার্বভৌমত্ব জনগণের ওপর নির্ভর করে। তারা নিজেরাই ঠিক করবে তাদের নেতা কে হবেন। সামরিক অভিযান বা যুদ্ধের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ফলাফল ভালো কিছু নিয়ে আসে না। এটি কৌশলগত ভুল। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। বর্তমান রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে না।’
এদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে শত্রুতা বন্ধ না হলেও সংঘাতের অবসান ঘটবে। এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, খামেনির জন্যই মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘পরমাণু ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। অথচ এটি তাদের জন্য একটি সুযোগ ছিল। এখন ইসরাইলিরাই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে অপসারণের দাবি তুলছেন। মূলত তার কারণের এই সংঘাত বিস্তৃত হয়েছে এবং সামনে আরও বাড়বে।’
চলমান উত্তেজনায় নিজ দেশের নাগরিকদের ইরান ও ইসরাইল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশকিছু দেশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই মুহূর্তে মার্কিন নাগরিকদের ইসরাইল ত্যাগ করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি।
এদিকে সংঘাতের পাঁচদিন পর ইরানের পক্ষে মুখ খুলতে শুরু করেছে মুসলিম দেশগুলো। মিশরের নেতৃত্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্কসহ ২১টি মুসলিম দেশ যৌথভাবে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণেরও আহ্বান জানায় দেশগুলো।