ইরান-ইসরাইল সংঘাতের এক সপ্তাহ হতে চললো। পাঁচদিন ধরে একটানা বিমান, বোমা, ড্রোন, মিসাইল দিয়ে চলছে হামলা-পাল্টা হামলা। সংঘাতের শেষ কোথায়, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
দুই দেশই পুরোদমে সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সমর্থন করে বরাবরের মতোই ইরানের বিরোধিতা করছে। কিন্তু সরাসরি এই যুদ্ধে না জড়িয়ে নিয়েছে কৌশলগত এক অবস্থান।সামরিক হস্তক্ষেপের কতটুকু আদায় করা সম্ভব, সেই ইস্যুতে ইসরাইলকে।
ইসরাইলি সূত্র বলছে, এই সংঘাতের আসবে কূটনৈতিক সমাধান, সামরিক নয়। ইসরাইলের আশা, চলমান সামরিক হস্তক্ষেপে ইরান দুর্বল হবে, পরমাণু আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্য সফল হবে।
ইসরাইলের সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র বিশ্লেষণ বলছে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পরমাণু আর ব্যালিস্টিক মিসাইলের হুমকি পুরোদমে শেষ করে দিতে চায় তেহরান। এই হুমকি মোকাবিলায় সামরিক চাপ কতদিন অব্যাহত থাকবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
যদিও ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হতে দিতে না চাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা করতে পারছে না তেল আবিব। সূত্র বলছে, ইসরাইলের কথোপকথন হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুদ্ধে সম্পৃক্ততা নিয়ে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সহিংসতা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছেন।
বিশ্লেষণ বলছে, ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করে ফেললেও দেশটির পরমাণু সক্ষমতা এখনও পশ্চিমাদের ধারণার বাইরে। ফোর্দোর মতো কোন কোন পরমাণু কেন্দ্র অবস্থিত মাটির গভীরে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা, আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া ইসরাইল যত চেষ্টাই করুক, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করলেও ইরানের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারবে না।
যদি সব পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস হয়ে যায়, তবু এই প্রজাতন্ত্র খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ এই দেশের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রাতিষ্ঠানিক পরমাণু শিক্ষা। যে কারণে পরমাণু চুক্তি না করে উল্টো ভবিষ্যতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিতে পারে তেহরান। আর এই সত্য উপলদ্ধি করতে না পেরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্ম দিচ্ছেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরাইল বরাবরই বলে আসছিল, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেই সতর্কবার্তা হিসেবে প্রথম হামলা করেছিলো তেল আবিব। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এই সংঘাত মোড় নিয়েছে অন্যদিকে। পরমাণু শক্তিধর সব দেশই এখন প্রকাশ্যে এই ধারণা পুষছে, নিজ নিজ দেশের প্রতিরক্ষার স্বার্থে পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজন। ১৩ জুন শুরু হওয়া এই সংঘাতের পর পরমাণু শক্তিধর সব দেশই আত্মরক্ষার জন্য পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলছে, কোন কোন দেশ ইরানকে সমর্থনের জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিউক্লিয়ার ওয়েপন ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে। এতে করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বে তৈরি হয়েছে আরেকটি পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা।