যুদ্ধ বন্ধে ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

বিস্ফোরণে কাঁপছে তেহরান। ইরানের সেন্ট্রিফিউজ ও অস্ত্র উৎপাদনে আঘাত হানার দাবি ইসরাইলের। সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৮৫ জন। যুদ্ধ বন্ধে ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান ট্রাম্প। ইসরাইলের সমর্থনে এরই মধ্যে রণতরির পর মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছেছে মার্কিন যুদ্ধবিমানের বহর। প্রতিক্রিয়ায় ‘যুদ্ধ শুরু’ বলে সামাজিক মাধ্যম এক্সে মন্তব্য খামেনির। আজও (বুধবার, ১৮ জুন) ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষাকে ফাঁকি দিয়ে হাইপারসনিক ফাত্তাহ মিসাইল লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে বলে দাবি তেহরানের।

ইরানের আকাশ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির মধ্যেই ইসরাইলের দিকে মঙ্গলবারও রাতভর দফায় দফায় চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ইসরাইলি বিমান হামলায় ব্যবহৃত ঘাঁটি লক্ষ্য করে এসব হামলা, দাবি তেহরানের।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস’-এর ১১তম ধাপে বুধবার ভোররাতে আবারও অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ‘ফাত্তাহ’ মিসাইল ছোঁড়ার খবর নিশ্চিত করে ইরানের অভিজাত সশস্ত্র বাহিনী আইআরজিসি। শব্দের চেয়েও দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। পশ্চিম তীরের আকাশে রাতভর দেখা মেলে ইসরাইলের দিকে ছুটে যাওয়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের।

অন্যদিকে ইরানজুড়ে ইসরাইলের বিমান হামলাও অব্যাহত। তেহরানে দফায় দফায় বিস্ফোরণ। সবমিলিয়ে ইরান-ইসরাইল নজিরবিহীন সংঘাতে টানা ষষ্ঠদিনের মতো সাইরেনের আওয়াজ, রাতের আকাশ চিরে মুহুর্মুহু মিসাইলের ছুটে যাওয়া, আর নিরস্ত্র মানুষের আতঙ্ক. যুদ্ধের চিরচেনা দৃশ্য।

ইসরাইলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক সক্ষমতা আর যুদ্ধের নির্দেশনা কেন্দ্রে গভীর আঘাত হেনেছি আমরা। আমরা সামরিক লক্ষ্যে আঘাত করছি। তারা বেসামরিক বাড়িঘরে হামলা চালাচ্ছে। বহুমুখী হুমকি মোকাবিলা করছে ইসরাইল। ইরানের দিক থেকে আক্রমণ ঠেকাতেও কাজ করছি আমরা। আবার গাজায় তাদের ছায়াবাহিনী হামাসের সাথেও লড়ছি।’

ছয়দিনে ইসরাইলের তুলনায় ইরানে পাঁচ গুণ বেশি হামলার তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা, প্রাণ গেছে প্রায় ৬০০ মানুষের। সবশেষ ইরানে কয়েকটি সামরিক স্থাপনা, বিশেষ করে পরমাণু কর্মসূচিতে জরুরি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্রে ৫০টির বেশি বিমান হামলার দাবি করেছে ইসরাইল। তেহরানে দফায় দফায় বিস্ফোরণ অব্যাহত, বলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

সংঘাত তীব্রতর হতে থাকার মধ্যেই বিমানবাহী রণতরি নিমিৎজের পর এবার মধ্যপ্রাচ্যে আরও বোমারু বিমান মোতায়েন করছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করতে সক্ষম এফ-১৬, এফ-২২ ও এফ-৩৫সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী।

যুদ্ধ পরিস্থিতি জটিল হতে থাকার মধ্যেই ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে 'আপাতত' হত্যার পরিকল্পনা না থাকলেও ভাবছেন ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলায় যোগ দেয়ার কথা। ইসরাইলি দাবি খারিজ করে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড জানালেও সেটি মানতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের কারণেই দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি।

কুইন্সি ইনস্টিটিউটের ইরান বিশেষজ্ঞ ও নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পার্সি বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার বদলে এই মুহূর্তে সম্ভবত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরও বড় অবনতির মুখে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। আজ টুইট করে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প, তাতে মনে হচ্ছে না যে সত্যিকার অর্থে কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের কোনো পরিকল্পনা তার আছে। তিনি আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাচ্ছেন। আমার মনে হয় যে ইরান আত্মসমর্পণকে আদতে কোনো পথ হিসেবে মনে করে কি না, সে হিসেবে তার ভুল আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ‘যুদ্ধ শুরু’ বলে মন্তব্য করেছেন খামেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ক্ষমা করা হবে না ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী ও তাদের মদতদাতাদের। দেয়া হবে কঠোর জবাব।

এ অবস্থায় ইরানে সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ঠেকাতে প্রেসিডেন্টের বিপরীতে সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ মার্কিন আইনপ্রণেতারা। অন্যদিকে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় বুধবার থেকে শুক্রবার মার্কিন দূতাবাস বন্ধ জেরুজালেমে। অন্যদিকে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক ও ইরানের ছায়া সংগঠন হিজবুল্লাহ।

এসএস