ইরান-ইসরাইল সংঘাতে বিপাকে বিদেশিরা, হজযাত্রী থেকে পর্যটক সবাই আতঙ্কে

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইরান-ইসরাইল সংঘাত এখন দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশেও। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পূণ্যার্থী, দুই দেশে অবস্থানরত পর্যটক এমনকি সৌদিতে অবস্থানরত হজযাত্রীরাও পড়ে গেছেন চরম বিপাকে। ইরান আর ইসরাইল ত্যাগ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন পাকিস্তান, আজারবাইজানসহ নানা দেশের মানুষ। কিন্তু যুদ্ধ কবলিত দেশ ছাড়তে গিয়ে তাদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। অন্যদিকে দেশে ফেরার সাহস পাচ্ছেন না দেশের বাইরে থাকা নাগরিকরা।

একপাশে কাস্পিয়ান সাগর, অন্যপাশে পারস্য উপসাগর, গাল্ফ অব ওমান আর আরব সাগরে ঘেরা ইরান। অন্য দুই পাশে সীমান্তে রয়েছে আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক আর তুরস্ক। ইরান–ইসরাইল সাম্প্রতিক সংঘাতে সমুদ্র সীমায় অস্থিতিশীলতা তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে ইরানের সীমান্তবর্তী দেশগুলোতেও উত্তেজনা চরমে।

ইরানে ইসরাইলের হামলায় তেহরান থেকে শত শত শিক্ষার্থী আর পূণ্যার্থীকে পাঠানো হয়েছে সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায়। কোয়েটা কর্তৃপক্ষ বলছে, পাঁচ শতাধিক পূণ্যার্থী ও দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে কোয়েটায় পাঠানো হয়েছে। এরপর তাদের নিরাপদে তাফতান সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা দিয়েছেন ইরানে ইসরাইলি হামলার রোমহর্ষক বর্ণনা।

পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমরা ইরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সের শিক্ষার্থী। সামরিক বাহিনী আমাদের বাসা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে হামলা চালিয়েছে।’

অন্য একজন বলেন, ‘জাহিদান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমি। ইসরাইল প্রথমে ফিলিস্তিনে হামলা করলো, এরপর ইরানে শুরু করলো। পাকিস্তান সরকরা আমাদের নিরাপদে ফিরিয়ে নিচ্ছে।’

যদিও ঝুঁকি বিবেচনায় ইরানের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। বাণিজ্য আর নাগরিকদের দেশে ফেরাতে খোলা আছে একমাত্র তাফতান সীমান্ত।

এদিকে ইরান ত্যাগ করছেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। অনেকেই ব্যবহার করছেন আজারবাইজানের আস্তারা স্থলসীমান্ত। তেহরান থেকে আজারবাইজানের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের এই সীমান্তে যেতে সময় লাগে সাড়ে সাত ঘণ্টা।

এদিকে ইসরাইলে ঘুরতে আসা পোল্যান্ডের নাগরিকরা মরিয়া হয়ে ছাড়ছেন যুদ্ধ কবলিত ইহুদি ভূখণ্ড। তেল আবিবের পোলিশ দূতাবাসের সামনে ভিড় করছেন তারা। ইরানের হামলার কারণে এরমধ্যেই দেশের প্রধান বিমানবন্দর বেন গুড়িয়ন বন্ধ করে দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। বন্ধ রয়েছে আকাশসীমাও। যে কারণে পর্যটকদের বন্দর শহর ইলাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেখান থেকে পাঠানো হবে মিশরের শার্ম আল শাইখে। যেখান থেকে তারা ফিরবেন নিজ দেশে।

পযৃটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ইসরাইলে এসেছিলাম বন্ধুর কাছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের যেই অবস্থা, তাতে দ্রুত এই দেশ ছাড়তে পারলেই বাঁচি।’

এদিকে হজ করতে সৌদি আরব গিয়ে আর দেশে ফিরতে পারছেন না ইরানের নাগরিকরা। যুদ্ধের কারণে সৌদি আরব থেকে ইরানগামী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় তারা আটকা পড়েছেন মরুর দেশেই। হাজার হাজার মানুষ দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন স্থলপথেই, ইরাক হয়ে যাবেন ইরানে।

ইরান থেকে হজ করতে আসাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রিয় দেশে ইসরাইল কাপুরুষোচিত হামলা করছে। যারা হজে ছিলাম, এই খবরে বেশ মর্মাহত হয়েছি। আমাদের শরীর মক্কা, মদিনায়, কিন্তু মন ইরানে।’

অন্য একজন বলেন, ‘ইরাক দিয়েই দেশে ফিরবো। ইরাকি ভাইরা আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। ক্যারাভ্যানে করে ইরাকের মধ্য দিয়ে ইরান সীমান্তে যাবো।’

আরব বর্ডার ক্রসিং কর্তৃপক্ষ বলছে, ইরাক সীমান্ত দিয়ে ৭৫ হাজার হজযাত্রীকে পার করার নির্দেশনা এসেছে। এরমধ্যে প্রতিদিন পার হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার পূণ্যার্থী।

এসএস