আরো ৮ মাস আগে ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় ইসরাইল

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

জনসমর্থন বাড়াতে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন নেতানিয়াহু। যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আরও আট মাস আগে। ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রকেও যুদ্ধে টেনে আনেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তবে এপির প্রতিবেদন বলছে, ইরান যুদ্ধ নেতানিয়াহুর জন্য লাইফলাইন হয়ে এলেও ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন।

জনসমর্থন বাড়াতে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন নেতানিয়াহু। যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আরও আট মাস আগে। ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রকেও যুদ্ধে টেনে আনেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তবে এ.পি’র প্রতিবেদন বলছে, ইরান যুদ্ধ নেতানিয়াহুর জন্য লাইফলাইন হয়ে এলেও ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন।

৭ অক্টোবর ২০২৩। হামাসের ছোড়া প্রায় সাড়ে চার হাজার রকেটের আঘাতে কেঁপে ওঠে ইসরাইল। ৭৭ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনোই দেখেনি ইহুদি ভূখণ্ড। প্রাণ হারান প্রায় দুই হাজার মানুষ।

সুরক্ষিত ইসরাইলে হামলার প্রতিশোধ তুলতে এরপর থেকে গাজায় অব্যাহত রয়েছে গণহত্যা। যদিও দিন দিন কমছিল নেতানিয়াহুর প্রতি ইসরাইলিদের জনসমর্থন। তাই গেল বছরই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তেল আবিবের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে এমনটাই দাবি করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

মার্কিন গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে অক্টোবরে বিমান হামলার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পাশাপাশি হত্যা করা হয় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্বকে। সেসময়ই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আইডিএফকে নির্দেশ দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই হামলা সফল হবে কী না, তা নিয়ে ছিল সংশয়। এ লক্ষ্যে দফায় দফায় দেনদরবারে পিছিয়ে যায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে, যুক্তিটির পক্ষে প্রমাণ উত্থাপনে এপ্রিলে হোয়াইট হাউজ সফর করেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। যদিও মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে এমন কোনো তথ্য ছিল না। অন্যদিকে তেহরানের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিলো ওয়াশিংটনের পরমাণু কর্মসূচির কার্যক্রম। এতে ধূলিসাৎ হয়ে যেত প্রতিশোধ বাস্তবায়নের স্বপ্ন। তাই ট্রাম্পের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পরই ১৩ জুনের প্রথম প্রহরে তেহরানে হামলা চালায় তেল আবিব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি নেতানিয়াহুর অন্যতম লক্ষ্য ছিল খামেনি সাম্রাজ্যের পতন। বাস্তবায়ন অসম্ভব জেনেও যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে টেনে আনেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।

মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের জ্যেষ্ঠ ফেলো শাহরাম আকবর জাদেহ বলেন, ‘নেতানিয়াহুর লক্ষ্য ছিল ইরানের বর্তমান সাম্রাজ্যের পতন। তিনি অনেক আগেই জানিয়েছেন, ইরানের ইসলামিক সাম্রাজ্য তিনি পছন্দ করেন না। একে তিনি অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখেন। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রও নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে।’

দুর্নীতির মামলায় নাজেহাল, জোটসঙ্গীদের হুমকি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি হামাসের হামলা প্রতিহতের ব্যর্থতায় নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল সমাপ্তির পথে। এমন পরিস্থিতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকেই শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি।

বার্তা সংস্থা এপির বিশ্লেষণ বলছে, ৭৫ বছর বয়সী ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ক্যারিয়ারে আরেকটি লাইফ লাইন হয়ে এসেছে এই যুদ্ধ। তবে হামাস নির্মূল কিংবা আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারলে আগামী বছরের নির্বাচনে পরাজয়ের মুখ দেখতে হতে পারে নেতানিয়াহুকে।

এসএস