অসম্ভবকে সম্ভব করে ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ চুক্তির পর বিশ্বজুড়ে আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসন। অনেকেরই ধারণা ছিল কিয়েভকে চাপে ফেলে চুক্তিতে রাজি করিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন ভিন্ন কথা।
প্রেসিডেন্টের দাবি, খনিজ চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে ইউক্রেনের শিল্পখাত আধুনিকীকরণের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। জানান, গেলো সপ্তাহে রোমে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের প্রথম ফল এই খনিজ চুক্তি। যাকে দুই পক্ষের জন্য ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আমি বৈঠকের প্রতিটা সেকেন্ড কাজে লাগিয়েছি। ভ্যাটিকান মিটিংয়ের প্রথম ফল এই চুক্তি। বর্তমান চুক্তিটি ভারসাম্য ও সমতা নিশ্চিত করেছে। চুক্তিটিকে পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।’
ফেব্রুয়ারির শেষ দিন ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেলেনস্কি। সেদিন খনিজ চুক্তির ধারাগুলোর বিরোধিতা করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তর্কযুদ্ধে জড়ান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। দুইমাস পর সাক্ষরিত চুক্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে সমতা। একে ইউক্রেনীয়দের বিজয় বলে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকেরা। যদিও জনগণের মধ্যে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিদ্বেষ।
ইউক্রেনের স্থানীয় একজন বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের জন্য আমাদের কিছু দিতে হতো। আমরা জীবনের পাশাপাশি সম্পদও দিচ্ছি। মনে হচ্ছে সবাই আমাদের শোষণের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘আমার স্বামী যুদ্ধে আছে। আমি চাই দ্রুত যুদ্ধবিরতি হোক। এজন্য খনিজ চুক্তি ছাড়া বিকল্প ছিল না।’
সেন্টার ফর ইকোনমিক স্টাডির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ভলোদিমির লান্ডা বলেন, ‘অবশেষে আমরা বলতে পারছি, ফ্রেব্রুয়ারির ধারাগুলোর চেয়ে এপ্রিলে সাক্ষরিত চুক্তি ধারাগুলো সমতা নিশ্চিত করেছে। আগের ফ্রেমওয়ার্ক অগ্রহণযোগ্য ছিল। কারণ সেটি পুরোপুরি ইউক্রেনীয়দের সম্পদ লুটের সামিল হতো। বর্তমান অবস্থা নিশ্চিতে জেলেনস্কি ও তার দল অসাধারণ কাজ করেছে।’
এদিকে খনিজ চুক্তির পর ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য উন্মুখ হয়ে আছে বিশ্ববাসী। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশা, শীঘ্রই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে দুইপক্ষ। যদিও এর বিপরীত কথা বলছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
তিনি বলেন, ‘দুইপক্ষই জানে এই নির্মম যুদ্ধ থামাতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য কী প্রয়োজন। তবে তারা সম্মতিতে আসতে চাচ্ছে না। আমার মনে হয়, শীঘ্রই যুদ্ধ থামার কোনো প্রকার সম্ভাবনা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘সম্মতিতে পৌঁছানোর বিষয়ে পরস্পর কাছাকাছি এলেও এখনো অনেকটা দূরে। এমন পরিস্থিতিতে যুগান্তকারী কিছু প্রয়োজন। আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট এমন সিদ্ধান্ত নিবেন, যার মাধ্যমে শীঘ্রই বোঝা যাবে যুদ্ধবিরতির জন্য কতটুকু সময় প্রয়োজন।’
তবে আলোচনার মাঝেও থেমে নেই সংঘাত। বৃহস্পতিবার রাতে জাপোরিঝিয়া ও ওডেসায় রুশ ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয়।