ট্রাম্পের হার্ভার্ড বিদ্বেষ, ক্ষতির মুখে পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়টির কারিকুলাম

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি,  ডোনাল্ড ট্রাম্প
উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হার্ভার্ড বিরোধী অবস্থানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির কারিকুলামের পাশাপাশি শিক্ষক এবং কর্মচারীরাও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১০ কোটি ডলারের তহবিল বাতিলের পরিকল্পনা করায় এই আশঙ্কা আরও তীব্র হচ্ছে। এর আগে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন গণমাধ্যমের দাবি, মূলত হার্ভার্ডের তহবিলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন তিনি।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা বাতিল করতে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ গেল ২৩ মে সাময়িকভাবে ভেস্তে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। মার্কিন গণমাধ্যমের দাবি, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে স্বনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাতে বাধা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তোলে হোয়াইট হাউজ। প্রতিক্রিয়ায় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, শিক্ষাগত স্বাধীনতা খর্বের এই অপচেষ্টা রুখে দেয়ায় প্রতিশোধের রাজনীতি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

আদালতের এই স্থগিতাদেশে উপকৃত হয়েছেন হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী। শুরু থেকে ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর এই পরিকল্পনাকে সংবিধান পরিপন্থিও বলে আসছিল আরেক স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ কেমব্রিজ। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত রুখে দেয়া না গেলে শিক্ষা ভিসায় পড়তে আসা সাত হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়তো।

তবে আদালতের রায় আরও উসকে দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া পোস্টে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ করে রাখা ৩শ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেয়ার পরিকল্পনা করছে বর্তমান প্রশাসন। পোস্টে হার্ভার্ডের সঙ্গে আবারও জুড়েছেন ইহুদিবিদ্বেষী শব্দটি। ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড স্কুলগুলোতে হার্ভাডের তহবিল খরচ করলে তা হবে একটি লাভজনক বিনিয়োগ। এছাড়া তিনি অভিযোগ করেছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকা দিতেও গড়িমসি করছে। যদিও একাধিক সূত্র বলছে, ৩০০ কোটি ডলার নয়, হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ হাজার কোটি ডলারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বর্তমান প্রশাসন।

এদিকে বিদেশি শিক্ষার্থীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে হার্ভার্ডের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কী হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, হার্ভার্ড অত্যন্ত ধনী একটি প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি তে চলে না। কিন্তু এই টিউশন ফি’র টাকায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের অনেক সুবিধা মেটানো হয়। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি ও সেবায়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো ও ধনী এই বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য নানাভাবে বরাদ্দকৃত সম্পদের মোট পরিমাণ ৫ হাজার ৩শ' কোটি ডলার। যেখানে পড়ছেন ১৪০ দেশের মোট ছয় হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী। আর, ২০২৩ এর ফল সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশই পড়তে এসেছেন বাইরে থেকে, শিক্ষা ভিসা নিয়ে। তবে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, এই এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী হার্ভার্ড ছেড়ে গেলে শিক্ষা কারিকুলাম নিয়েও ভাবতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

এসএস