এবার মোটা দাগে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার মোট ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তালিকায় আছে ইরান, আফগানিস্তান, ইয়েমেনের মতো মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র। রয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারও।
তবে, আফগানিস্তান ও ইরানের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার উদ্দেশ্য মার্কিন ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী সংগঠনের অপতৎপরতা বন্ধ করা। ভ্রমণ ভিসায় মার্কিন মুলুকে এসে মেয়াদ ফুরানোর পরেও সেখানে থেকে যাওয়ার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় রাষ্ট্রের নাগরিকরা। পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা অধিকাংশ দেশের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে পাসপোর্ট প্রণয়নে অব্যবস্থাপনার অভিযোগও।
আগামী ৯ জুন কার্যকর হতে যাওয়া এই নির্দেশের পেছনে জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা কলোরাডোতে ইহুদি কমিউনিটির ওপর সাম্প্রতিক হামলা ইত্যাদি কারণ দেখানো হলেও বিশ্লেষকদের দাবি, এর সঙ্গে জড়িত ট্রাম্পের ইমেজ রক্ষার স্বার্থও।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. অ্যান্ড্রু গাওথর্প বলেন, ‘এটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভাবমূর্তির একটি বড় অংশ। মূলত ইমেজ ধরে রাখার কৌশল। এই সিদ্ধান্তের পেছনে যেমন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাব আছে, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে পাসপোর্ট বা নাগরিক সনদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি পর্যালোচনায় নির্ভরযোগ্য কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। পাশাপাশি, পশ্চিমাদের বয়ানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত তালেবান গোষ্ঠীর সঙ্গে ওয়াশিংটনের বনিবনা হচ্ছে না শুরু থেকেই। এছাড়া, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অনেক আফগান অবৈধভাবে মার্কিন মুল্লুকে বসবাস করছেন- এমন সব অভিযোগের কারণে আফগানিস্তানের নাগরিকদের রাখা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার আওতায়।
ইরানের বিরুদ্ধে আছে সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদদ দেয়া, পরমাণু কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়া, মধ্যপ্রাচ্যে হামাস ও হিজবুল্লাহ'র মতো অক্ষশক্তি মিত্র ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর মতো অভিযোগ। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে নমনীয় না হওয়ায় ইরানের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিয়ে চলমান কূটনৈতিক বিরোধ আরও তাজা করলো ওয়াশিংটন।
লিবিয়া ও সোমালিয়ার বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী সংগঠন চালানো, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বায়না নেয়ার অভিযোগ এনেছে হোয়াইট হাউজ। পাশাপাশি এই দুই দেশের পাসপোর্ট প্রণয়ন ব্যবস্থা নিয়েও সন্তুষ্ট নন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাইডেনের শাসনামলে করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী হাইতির নাগরিকদের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৮ লাখেরও বেশি। অথচ এরা কবে কীভাবে মার্কিন ভূখণ্ডে এসেছেন এর কোনো তথ্য ছিল না তৎকালীন প্রশাসনের কাছে। অভিবাসন ছাড়াও মার্কিন ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক চালানোর মতো অভিযোগ থাকায় ক্যারিবীয় রাষ্ট্রটির নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ আটকে দিচ্ছে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন।
আফ্রিকার দেশ চাঁদ, কঙ্গো ও গিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভিসা বা বসবাসের অনুমতির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও এই রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়া যায় না। যাকে অভিবাসনের ভাষার বলে 'ওভারস্টে'। ২০২৩ সালে চাঁদ থেকে ভ্রমণ বা বাণিজ্য ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা ৪৯ শতাংশই আর দেশে ফেরননি বলে অভিযোগ হোয়াইট হাউজের।
এছাড়া, পাসপোর্টের গ্রহণ যোগ্যতা, ওভার স্টে ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নিষেধাজ্ঞা এসেছে মিয়ানমার, সুদান ও ইয়েমেনের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বার্মিজ নাগরিকদের দেশে ফেরত নেয়ার বেলায়ও মিয়ানমারের উদাসীনতা চটিয়ে দিয়েছে ট্রাম্পকে।