জুলাই আন্দোলনে নরসিংদী: কারাগারে হামলা, সড়ক অবরোধ আর চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ

আন্দোলনের সময় নরসিংদী জেলখানার মোড়
দেশে এখন
0

জুলাই আন্দোলনের সময় দেশে সবচেয়ে আলোচিত ছিলো নরসিংদী জেলা কারাগারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের ঘটনা। এছাড়া, জুলাইজুড়ে উত্তাল ছিলো নরসিংদী। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কার্যক্রমে সরব ছিলো এই জেলার বাসিন্দারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদে নেমেছিলো নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ভাইদের আহত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমেছি।

১৬ জুলাই ২০২৪। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দুপুর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানার মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল নাগাদ রূপ নেয় জনসমুদ্রে । স্লোগানে স্লোগানে ঝরে পরে নতুন প্রজন্মের বুকে জমে থাকা ক্ষোভ। রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব নিতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের চোখে পুলিশের টিআর শেলের ঝাঁজ । পথে পথে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের বাধা। তবুও হাল ছাড়েনি কেউ।

নরসিংদীর জুলাই যোদ্ধা শাফায়াত জামিল মাহির বলেন, ‘১৬ জুলাই মূলত আমাদের নরসিংদীতে আন্দোলনটা ম্যাসিভ আকার ধারণ করে। আমাদের প্রথম লোকেশন দেয়া ছিলো স্টেডিয়াম। সেখানে আমরা বিভিন্ন প্লে কার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম।’

জুলাই যোদ্ধা জাহিদ বিন ইসলাম রাফি বলেন, ‘যখন ঢাকা থেকে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় তখনি আমাদের নরসিংদীর ছেলেমেয়েরা জেলখানার মোড়ে একত্রিত হতে থাকে। এবং ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলে।’

১৮ জুলাই বিকেলে স্ট্রেচারে করে নেয়া হয় ১৫ বছরের কিশোর নরসিংদীর প্রথম শহীদ তাহমিদ ভূঁইয়ার মরদেহ।

সেদিন কিছুক্ষণের জন্য হলেও থমকে গিয়েছিলো নরসিংদী। তারপর, জেলখানার মোড়ে মহাসড়ক নেয়া হয় আরও শক্ত অবস্থান। পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। সে সময়ের বর্বরতার কথা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠেন জুলাই যোদ্ধারা।

নরসিংদীর জুলাই যোদ্ধা ও সংগঠক জাহিদ হোসেন জাপ্পি বলেন, ‘যেদিন আমাদের স্নেহের ভাই তাহমিদ মারা গেছে ওইদিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনো গা শিওরে ওঠে।’

নরসিংদীর আহত জুলাই যোদ্ধা সানবির আহমেদ নিবির বলেন, ‘১৮ তারিখ যেদিন তাহমিদ মারা যায়, ওকে যেখান থেকে গুলি করা হয় সেখান থেকেই পুলিশ অনবরত গুলি করছিলো। আমিও আঘাত পেয়েছি বুকে, পিঠে।’

হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পেট, পিঠ এবং বুকে আঘাত নিয়েই সড়ক দখল করে শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সামনে দুইহাত প্রসারিত করে জানান দেয়, বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।

আন্দোলন চলাকালীন জেলার সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ১৯ জুলাই বিকেলে। জেলা কারাগারের মূল ফটক ভেঙে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা। পালিয়ে যান ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ কয়েদির সবাই। লুট করা হয় ৮৫টি অস্ত্র ও প্রায় ৮ হাজার রাউন্ড গুলি।

ভাঙচুর এবং লুটপাটের পরদিন সকালেরও কারাগারে জ্বলছিলো আগুন। ফিরে আসেন আগের দিন পালিয়ে যাওয়া অনেক বন্দি। কয়েকমাস পর কারাগার সংস্কার হলেও এখনও উদ্ধার হয়নি ২৮টি অস্ত্র ও ৬ হাজারের বেশি গোলাবারুদ। আত্মসমর্পণ এবং অভিযান করে ইতোমধ্যে কারাগারে ফেরানো হয়েছে ৬শ' ৫৪ জন কয়েদিকে। তবে, এখনো নরসিংদী কারাগার ঝুঁকিতে জানান জেল সুপার।

নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘৮২৬ কয়েদির থেকে আমরা ৬৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। এর মধ্যেও অনেকে আত্মসমর্পণ করে আবার অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। যে অস্ত্রগুলো হারিয়ে গিয়েছিলো তার মাঝে আমরা ৫৭টি অস্ত্র উদ্ধার করতে পেরেছি।’

জেল সুপার শামীম ইকবাল বলেন, ‘এটা যে শুধু নিরাপত্তার হুমকি তা নয়। এখানে মাদকের বিষয় আছে, আমাদের দেয়ালটাও রাস্তার সাথে লাগোয়া।’

৩৬ জুলাই বিজয়ের খবরে জেলখানা মোড়ে উচ্ছ্বাসে যোগ দেয় হাজারো মানুষ। তবে, এর আগে জেলায় ৫ শতাধিক আহতের পাশাপাশি শহীদ হন অন্তত ২০ জন।আপস.


ইএ