সঠিক নজরদারীর অভাবে বরিশালে পুকুরগুলো অস্তিত্ব হারাচ্ছে!

এখন জনপদে
0

ধান-নদী আর খালের ঐতিহ্য মিশে আছে বরিশালের সাথে। তবে দখল, দূষণ আর ভরাটে নগরীর অধিকাংশ পুকুর ও জলাশয় বিলীনের পথে। যার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে নগরবাসী। এ অবস্থায় জলাশয়ের অস্তিত্ব রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ পরিবেশবিদদের। আর সিটি করপোরেশন বলছে, জলাশয় ভরাটে নেয়া হচ্ছে আইনানুগ ব্যবস্থা।

এক সময় বরিশাল শহরকে বলা হতো প্রাচ্যের ভেনিস। নদী–খাল–বিল ও জলাধারের কারণে ইতালির ভেনিস শহরের সঙ্গে ছিল এমন তুলনা। ভেনিস এখনও নদী–খালের শহরে থেকে গেলেও, বরিশাল থেকে এসবের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণে একটি শহরের প্রাণ–পরিবেশ কতটা সংকুচিত হতে পারে, তার বড় উদাহরণ বরিশাল।

নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল রোডে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের পুকুরের চিত্র। ৩৩ শতাংশ পুকুরের অর্ধেকের বেশি ইতোমধ্যেই ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। দূষিত হচ্ছে পুকুরের পানি। দখল-দূষণ আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বরিশাল নগরীর বেশিরভাগ পুকুরের অবস্থা এমন বেহাল।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'পুকুরের যে পরিবেশ সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। পানিটাও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ওটাকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য কোনো মানুষ আছে বলে মনে হয় না।'

অন্য একজন বলেন, 'পুকুরগুলো না থাকার কারণে আমাদের বরিশালের মানুষের জীবন খুব বিপদাপন্ন। বিপর্যয়ের মুখে আমরা পড়তে যাচ্ছি।'

২০০০ সালের পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কোনো পুকুর বা জলাশয় ভরাট দণ্ডনীয় অপরাধ। ব্যক্তিগত পুকুর বা দিঘি ভরাট করতে হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। তারপরও একের পর এক জলাধার ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। তবে পরিবেশবিদদের অভিযোগে নিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।

দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই নগরীর একটি পুকুরের চিত্র। এরকমভাবেই নগরীর বেশিরভাগ পুকুর দিন দিন দখল, দূষণ আর ভরাটে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। পুকুরগুলো ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে বড় বড় দালানকোঠাসহ নানা স্থাপনা। সঠিক নজরদারির অভাবে পুকুরগুলো তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছে সচেতন মহলের নেতারা। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নজরদারি বাড়ানো গেলে পুকুরগুলো এখনও টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

বরিশাল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির রান এবং নেটওয়ার্ক সদস্যের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম বলেন, 'বরিশালের খাল-বিল জলাশয়গুলো ভরাট করা হচ্ছে। এবং এই দুইপাশ ভরাট করা হচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করছি কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ নেয়া উচিত এ ব্যাপারে।'

বেলা বরিশাল কার্যালয়ের বিভাগীয় সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, 'নদী, ভূমি এবং পুকুরের সাথে সম্পৃক্ত যে বিভাগগুলো রয়েছে তারা যদি এগুলো রক্ষা করার চেষ্টা নেয় তাহলেই মূলত আমাদের পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।'

সিটি করপোরেশন বলছে, অনুমোদন ছাড়া পুকুর ভরাটের খবর পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, 'স্থানীয়দের থেকে যে কেউ আমাদের খবর দেয় যে অবৈধ কাজ হচ্ছে তখন আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এখন রাতের বেলা তো আমাদের অফিস বন্ধ থাকে। তখন আমাদের অফিসাররা তো মাঠে থাকে না। তখন সমস্যাটা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা যতটা বুঝতে পারি, বেশি রাতে তারা কাজগুলো করার চেষ্টা করে। তখন আমরা সাথে সাথেই আমাদের যে অফিসার আছে টিমসহ পাঠিয়ে দিই।'

২০১০ সালের মাস্টার প্ল্যানের তথ্যানুযায়ী বরিশাল নগরে ৪৩৬টি পুকুর থাকলেও এখন ২০০ পুকুরেরও অস্তিত্ব নেই। পুকুর ও জলাশয়ের অস্তিত্ব রক্ষায় দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।

এসএস