একের পর এক ভাঙছে নদীর পাড়। ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন নদীতীরের মানুষ। ভাঙনের কবলে কবরস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
চর ডাকাতিয়া পাড়ের হাজারী গ্রামের ৬০ বছর বয়সী মোহাম্মদ হানিফ উদ্দিন। যমুনার করাল গ্রাসে কমপক্ষে ১০ বার বসত ভিটে হারিয়েছেন নদী গর্ভে। নদীর সঙ্গে সংগ্রাম করে জীবনের শেষ সময়ে অনেকটাই ক্লান্ত তিনি।
একই অবস্থা পাকরুল গ্রামের ফকির আলীরও। ৫৯ বছরে ৩১ বার ভিটে বাড়ি হারিয়ে সবশেষ আশ্রয় নিয়েছেন গুচ্ছ গ্রাম। যমুনার অব্যাহত ভাঙ্গনে সেই গুচ্ছ গ্রামও এখন ভাঙ্গনের কবলে।
মোহাম্মদ হানিফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার বয়সে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ বার বাড়ি ভেঙেছে। নদী ভাঙনের ফলে আমার জায়গা-জমি, অর্থ-সম্পদ যা ছিল তার সবই নদী গর্ভে চলে গেছে।’
দুই দশক ধরে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ আর মাদারগঞ্জের প্রায় অর্ধশত গ্রাম বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তবে অসময়ের ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
গেল দেড় মাসে বিলীন হয়েছে ৬ কিলোমিটার এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি। এতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের দুই পাশে।
নদী ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখানে অনেক স্কুল, মাদ্রাসা ছিল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল। সেগুলো সব আমার চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।’
বর্তমানে তীব্র ভাঙনের মুখে চার ডাকাতিয়া পাড়া হাজারী গ্রামের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর মাত্র ১০-১৫ মিটার ভাঙলেই নদীগর্ভে বিলীন হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ভাঙন আতঙ্কে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।
এ ছাড়া ভাঙনের মুখে চলাচলের রাস্তা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, তীব্র ভাঙনে ১৫ দিন আগে জরুরি ভিত্তিতে কিছু জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করা হলেও টেকেনি এক দিনও।
বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়টি একদম নদীর ওপরে। যেকোনো মুহূর্তে এটাও চলে যাবে।’
আরেকজন বলেন, ‘যে বিদ্যালয়টি আছে, সেটাও যদি বিলীন হয়ে যায় তাহলে এই এলাকায় লেখাপড়ার সুযোগ একদম শূন্য হয়ে যাবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, যমুনা নদীর ভাঙন রোধে গেল ৫ বছর ধরে চলছে প্রকল্পের কাজ। ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদারগঞ্জে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় চলছে ২১ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ। তবে ২৩ কিলোমিটারজুড়ে এখনো কোনো প্রকল্প না থাকায় ভাঙন ঠেকাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ভাঙনকবলিত জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছি। এই জায়গাগুলোর জন্য আমাদের যে বরাদ্দ প্রয়োজন, তার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি যেন আমরা জরুরি ভিত্তিতে কাজগুলো গ্রহণ করতে পারি। এর অনুমোদন পেলেই কাজগুলো জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গেল দুই যুগের বেশি সময় ধরে ভাঙনের শিকার হয়ে আসছেন জামালপুরের লাখের বেশি মানুষ।