বরগুনায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সরঞ্জাম

বরগুনার একটি হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ড
স্বাস্থ্য
এখন জনপদে
1

জানুয়ারি থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুতে আর প্রাণ ঝরেছে ২৩ জনের। যার মধ্যে বরগুনাতেই আক্রান্ত দেড় হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে এখন পর্যন্ত ৮ জনের। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত বাড়লেও সদর হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর তীব্র সংকট। নেই আইসিইউ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। সেবা পেতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

মায়ের ছবির পাশে অপলক দৃষ্টিতে ২ বছরের শিশু ইয়ানা। ঈদের আগের দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মা মোনালিসা জেরিন পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। তাইতো ইয়ানার নির্বাক চোখ খুঁজে ফিরছে মাকে।

এর কিছুদিন আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নিয়েছে শিশু উপমা। ১১ বছরের মেয়েকে হারিয়ে বিষাদে স্তব্ধ জেলা বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মোল্লা।

নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘যার যার আঙিনা, বাসার ছাদ ও আশপাশ যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে, তাহলে আমার মনে হয় তা ডেঙ্গু প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে।’

বর্ষার আগেই এই জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ জন। জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা রীতিমতো অবাক করার মতো। যা সারাদেশের মোট রোগীর ২৫ শতাংশ। এদিকে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গুর সংখ্যা বাড়লেও জেলার ১২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় সদর হাসপাতালে সংকট রয়েছে চিকিৎসকসহ নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর। পাশাপাশি নেই আইসিইউ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি।

রোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এরা কোনো ওষুধ দেয় না। একটা প্যারাসিটামল খেয়ে পড়ে আছি।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা রোগীকে নিয়ে এখন ঢাকায় যাচ্ছি। যদি এখানে সমস্ত ব্যবস্থাগুলো থাকতো তাহলে তো আমরা লাইফ রিস্ক নিয়ে এত দূর যেতাম না।’

বরগুনা সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট আশিকুর রহমান আশিক বলেন, ‘আমাদের গড়পরতা রোগী দেখা লাগছে, যেটা ডেঙ্গু রোগীর জন্য বিপদজনক হতে পারে। কারণ আমাদের কিছু রোগীর যে এক্সটেনশন দরকার তা আমরা দিতে পারছি না।’

বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টার মেইলে এবং তার হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরেও আমরা ম্যানপাওয়ার চেয়েছি যেন আমাদের জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার এবং নার্স দেয়া হয়, নয়তো আমরা মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে যাবো।’

তবে বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও সেবার মান বাড়াতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক।

বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ হচ্ছে রোগটা শনাক্ত করা, রোগের চিকিৎসা দেয়া, উপদেশ দেয়া। রোগটা কীভাবে আসছে সেটা নিয়েও স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে, স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে।’

এদিকে সদর হাসপাতালের ঠিক পাশেই দেখা যায় ময়লার স্তূপ। মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঢিলেঢালা কার্যক্রমসহ পৌরসভার ডাস্টবিন দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে, পৌর প্রশাসক বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হচ্ছে কার্যকর পদক্ষেপ।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই ময়লার স্তূপটা পড়ে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পুরাই উদাসীন।’

আরেকজন বলেন, ‘এখানে সুস্থ মানুষ এসে আরো উল্টো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

বরগুনা পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আমারা চেষ্টা করছি এবং মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি।’ 

এসএইচ