ভয়াবহ বন্যায় গেলো বছর ভারতের উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানির তোড়ে ফুলগাজীর বৈরাগপুরে কহুয়া নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, হুমকির মুখে পড়ে বাসিন্দাদের সম্পদ-জীবন। জলমগ্ন ছিল গ্রাম থেকে শহর-গোটা জনপদ। ভয়াবহ সেই দুর্যোগের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি ফেনীবাসী।
বন্যার দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি বাঁধের কাজ। জিও ব্যাগগুলো পড়ে আছে রাস্তার ওপর। গেল কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পরশুরামের বল্লারমুখাসহ বাঁধের ফুলগাজী-পরশুরাম অংশের আরো ৪১টি স্থান।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বরাদ্দ হিসেবে কাজটা যেভাবে হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি। আমরা দেখেছি এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে বড় গাফিলতি। যেখান থেকে বালু উত্তোলন করার কথা সেখান থেকে না করে বেরিবাঁধের গোড়া থেকে তোলার কারণে সেটা আবার আগের মতো ঝুকিপূণ হয়ে উঠছে।’
নদীর তীরবর্তীরা বলছেন, মুহুরী নদীর পুরো বাঁধটিই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির চাপে যেকোনো সময় এই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ না হলে ঝুঁকির মুখে পড়বে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাসিন্দা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বন্যা হয়ে গেছে এক বছর হয়ে গেলো অথচ এখনো রাস্তা সংস্কারের কাজ হয়নি। আমরা চলাচল করতে পারছি না। নদীর পানি আবার বাড়তেছে।’
বাঁধের কাজে ‘নয়-ছয়’ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ভিন্ন সুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
ফেনীর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই প্রস্তাবনা দাখিল করেছি ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার। এই প্রকল্পটা পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত এখানকার দুর্ভোগ শেষ হবে না। একটু ভারী বন্যা হলেই বাঁধ ভেঙে এখানকার মানুষের দুর্ভোগ আসতে পারে।’
গেল বছরের বন্যায় ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়ার ১২২ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে ১০২টি স্থানে। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে সরকারের ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলেও জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মুহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করেছে পাউবো। এ প্রস্তাবনায় যুক্ত হয়নি প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে অধিগ্রহণসহ প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।