ফেনীতে আগ্রাসী নদীভাঙন; ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা তীরবর্তী মানুষ

ফেনীর নদী ভাঙন
এখন জনপদে
0

চলতি বর্ষায় আগ্রাসী রূপে ফেনীর নদীগুলো। বিস্তীর্ণ এলাকা ভয়াবহ নদী ভাঙনের কবলে। ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা তীরবর্তী মানুষ। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রকল্পের কাজ দ্রুতই শুরু হবে।

নদীভাঙনে বিলীন একের পর এক এলাকা, ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা মানুষ। ফেনী নদীর আগ্রাসী এই চিত্রই বলে দিচ্ছে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ভাঙন।

মাহতাব উদ্দিন নেহাল সোনাগাজীর কুঠিরহাট এলাকার নদীপাড়ের চর ঘোপালগাঁওয়ের বাসিন্দা। মাস খানেক আগেও এখানেই ছিল বসতি। যদিও এখন সে ভিটেহীন, নেই মাথা গোজার একমাত্র ঠাঁইটুকুও।

মাহতাব উদ্দিন নেহাল বলেন, ‘মুসাপুর ক্লোজারটা যদি দ্রুত নির্মাণ না করা হয় তাহলে আমাদের মতো শতশত পরিবার নদীভাঙনের কারণে পথে বসে যেতে বাধ্য হবে।’

শুধু এই এলাকা নয়, আশপাশের ছয় আনি, চরমজলিসপুর, কাটাখিলা, কাজিরহাট, বিষ্ণুপুরসহ প্রায় ১৫টি ইউনিয়নের মানুষ আতঙ্কে খোলা আকাশের নিচে রাত পার করছেন। একটাই আশঙ্কা, আজ নয়তো কাল নদীগর্ভে বিলীন হবে তাদের শেষ সম্বলটুকু।

সর্বস্ব হারিয়ে লাখো মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেবল বসতভিটা নয়, নদীর গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে কবরস্থান, শ্মশানও। একদিকে সর্বস্ব হারানোর আতঙ্ক, অন্যদিকে লোনা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি মাঠ। পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে নদীতীরে আন্দোলন করেছেন এলাকাবসী।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এর আগে নদী ভাঙার সময় মন্দিরসহ চলে গেছে। আমাদের এখানে দাসপাড়ার অনেক ঘরবাড়ি নদীর পানিতে চলে গেছে।’

অন্য একজন বলেন, ‘ছোট ছোট বাচ্চাদের এখন দুই তিন কিলোমিটার ঘুরে অন্য পথ দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। এই অবস্থায় অনেক বাচ্চাই স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ছে।’

নদীপাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি কিন্তু তাদের কোনো টনক নড়েনি।’

গেল বছরের আগস্টের বন্যায় পানির চাপে ভেঙে পড়ে মুছাপুর ক্লোজার। এরপর থেকেই ভয়াবহ রূপ নেয় নদীভাঙন। স্থানীয়দের অভিযোগ, একদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন, অন্যদিকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দ্রুত ভেঙে পড়ছে নদীতীর। এ অবস্থায় জোড়াতালি নয়, টেকসই সমাধানের দাবি স্থানীয়দের।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১৭১ কোটি টাকার প্রকল্প এরইমধ্যে অনুমোদন হয়েছে। ছোট ফেনী, কালিদাস পাহালিয়া নদীতীরের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় নেয়া হয়েছে প্রতিরক্ষামূলক কাজের পরিকল্পনা। এছাড়াও মুহুরি, কহুয়া, সিলোনীয়া নদীতীরের ১৬ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘এই ভাঙন বন্ধ করার জন্য আমরা জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এর বাইরে আমাদের একটি চলমান প্রজেক্টের আওতায় প্রায় দেড় কিলোমিটার কাজ চলমান আছে। আর নতুন করে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা দিয়ে প্রকল্পে ছোট ফেনী নদীতে সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীরক্ষামূলক কাজ আছে।’

এসএস