বগুড়ায় শিক্ষার্থী পরিবহনে ৮১ বছরের ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ঝুঁকির মুখে নিরাপত্তা

এখন জনপদে
19

বগুড়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী নিয়ে সড়কে চলছে ৮১ বছর আগের ফিটনেসবিহীন গাড়ি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে যে গাড়িগুলো চলছে তার বেশিরভাগেরই এমন হাল। এমনকি পুলিশের স্কুলের নামেও চলছে ফিটনেসবিহীন প্রায় ৪০ বছরের পুরনো গাড়ি। ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাড়িতে শিক্ষার্থী পরিবহনে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, স্কুল-কলেজের গাড়ি হওয়ায় আইন প্রয়োগে কঠোর হতে পারছেন না তারা।

বগুড়ায় সড়ক-মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফিটনেসবিহীন গাড়ি বিকল পড়ে থাকার দৃশ্য নিত্যদিনের।

স্কুল-কলেজের নামে ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি সড়কে চলাচলে যেন কোনো বাধা নেই। আর এই সুযোগে ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি সড়কে নামানোর প্রতিযোগিতায় মেতেছে বগুড়া শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

বগুড়া শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যবহার করা গাড়ির নির্দিষ্ট হিসাব নেই সরকারি দপ্তরেই। তবে সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪০টি পরিবহনের নম্বর সংগ্রহের পর শুরু হয় এখন টেলিভিশনের অনুসন্ধান। বিআরটিএ বগুড়া অফিসে গিয়ে দেখা যায় একটি গাড়িরও ফিটনেস ঠিক নেই।

বগুড়া শহরের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছুটির ঘণ্টা বাজলে একে একে বেরিয়ে আসে ১৯টি গাড়ি। যার মধ্যে ৬টি গাড়ির নিবন্ধন বাতিল করেছে বিআরটিএ। পাঁচটি গাড়ির কোনো তথ্য নেই বিআরটিএর সার্ভারে। বাকি আটটি গাড়ি ফিটনেস হারিয়েছে অনেক আগেই। ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী পরিবহণ করা হলেও, এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান।

বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাস মালিকদের ডাকি। ডেকে তাদের সাথে কথা বলার পর বিষয়টা বলতে পারবো আমি। তাদের কাগজ তো আমরা প্রতিবছর চেক করি না। এটা তো তাদের দায়িত্ব যে, গাড়িগুলো তাদের ঠিক করে দেয়া। তাদের সঙ্গে সেভাবেই কথা বলা। না জেনে, না শুনে বক্তব্য দেবো কীভাবে?’

এ ছাড়া বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিবহন ব্যবস্থাও একই রকম। চারটি গাড়ির একটি ফিটনেস হারিয়েছে ২০১৩ সালে, আরেকটি ২০১৪ সালে। বাকি দুটি গাড়ির ফিটনেসের কোনো তথ্য নেই বিআরটিএর সার্ভারে। তবে গাড়ির নম্বর প্লেট ধরে পাওয়া যায় তৈরির সাল। একটি ১৯৫৯ সালে তৈরি করা, অন্যটি ১৯৭৮ সালে। এত অনিয়ম থাকার পরেও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ?

বগুড়া সদর ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিটি বাসের ফিটনেস বা ট্যাক্স সরকারকে পে করা হচ্ছে কি না। টাকা পে করা হচ্ছে কি না তাদের দেখা উচিত। আমরা মানবিক কারণে যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা থাকে তারা ক্লাসে যায় বা পরীক্ষার্থী যারা থাকে তাদের সমস্যা হবে বলে কাগজ চেক করি না।’

এদিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো খোদ পুলিশ পরিচালিত প্রতিষ্ঠানেও চলছে অবৈধ যানবাহন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাতটি পরিবহনের তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির দুইটি গাড়ির নেই ফিটনেস, যার একটি গাড়ির বয়স প্রায় ৪০ বছর। দুটি গাড়ির তথ্যই নেই বিআরটিএর সার্ভারে। বাকি তিনটিতে লাগানোই হয়নি নম্বর প্লেট। এসব স্বীকার করে দ্রুত ফিটনেসবিহীন গাড়ি সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ।

বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজের মাহবুবা হক বলেন, ‘আমাদের যে গাড়িগুলো এখনও ফিটনেববিহীন অবস্থায় আছে, আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে সে গাড়িগুলোকে সড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। একেএকে সবগুলো ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো আমরা তুলে নেবো।’

বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ বছর আগে ফিটনেস হারানো গাড়িগুলো বিআরটিএ থেকে ব্লক করে দেয়া হয়েছে। সড়কে চলাচল বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস কর্মকর্তারা।

বিআরটিএ বগুড়া সার্কেলের সহকারী পরিচালক হারুন উর রশিদ বলেন, ‘আনফিট গাড়ি এবং অবৈধ যে যানবাহন আছে এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের মোবাইল কোর্ট অব্যাহত আছে। অভিযোগটা আমরা নিয়েছি, গ্রহণ করলাম। আমরা এ ব্যাপারে এডিএম স্যারের সঙ্গে, প্রয়োজনবোধে ডিসির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ নেবো।’

বগুড়া শহরের স্কুল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী আনা নেয়ার জন্য যে পরিবহনগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পরিবহনগুলো নির্দিষ্ট সময় পর পর ফিটনেস পরীক্ষার জন্য বিআরটিএ কার্যালয়ে আনার কথা থাকলেও যুগের পর যুগ কেটে যাচ্ছে কিন্তু ফিটনেস পরীক্ষার জন্য আনা হচ্ছে না বিআরটিএ কার্যালয়ে। ফিটনেসবিহীন ভাবেই চলছে সড়ক মহাসড়কে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আইন প্রয়োগ করছে না মানবিক কারণে ফলে ঝুঁকি বাড়ছে শিক্ষার্থী আনা-নেওয়ায়। শিক্ষার্থী অভিভাবকদের দাবি এসব সমস্যা সমাধান করে নিরাপদ করা হোক স্কুল কলেজে যাতায়াত।

এসএস