‘উপদেষ্টারা মুখে আশ্বাস দিলেও এক বছরে ফেনীর জন্য কিছুই করেননি’

ফেনী কমিউনিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভা
এখন জনপদে
0

২০২৪ সালের শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার এক বছরের স্মৃতিচারণ এবং এর স্থায়ী সমাধানে করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা জানান, ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফেনী জেলা গত ১৬ বছরের মত এখনও অবহেলিত, এক বছরে দুবার ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হলেও রেমিট্যান্স সমৃদ্ধ এ জেলার মানুষের জন্য তেমন কিছুই করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টারা মুখে আশ্বাস দিলেও এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলেও জানান তারা।

আজ (শনিবার, ২৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক সংগঠন ‘ফেনী কমিউনিটি’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতি ছিলেন কমিউনিটির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, সঞ্চালনা করেন কমিউনিটির সদস্য সচিব বুরহান উদ্দিন ফয়সল।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোতাহের হোসেন, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী ফারাবী হাফিজ, জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. নিজাম উদ্দিন, কানাডা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, ব্যবসায়ী ও ফেনী ফোরামের সহ-সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার, সোনাগাজী ফোরামের সভাপতি ইব্রাহিম বাহারী, ব্যাংকার ও সমাজকর্মী ওমর ফারুক, ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম, সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল, সৌদি আরব বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদসহ আরও অনেকে।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘গত বছরের ফেনীর বন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ ঘটনা। কিন্তু আমরা বন্যার পরপর প্রথম হতাশ হয়েছি প্রধান উপদেষ্টা ফেনীর বানভাসীদের দেখতে না যাওয়ায়। তিনি অন্তত হেলিকপ্টার নিয়ে ঘুরে আসতে পারতেন।’

এবারের বন্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা এলাকা পরিদর্শন করায় ধন্যবাদ জানান তিনি।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সম্প্রতি একনেকে ফেনীর বন্যা মোকাবিলায় একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। যদিও এটির বাজেট চাহিদার তুলনায় অর্ধেক, জানি না তাতে কতটুকু হবে। তবে এটি দুর্নীতিমুক্ত রাখা গেলে সম্ভব হবে। এজন্য জেলার সব মত-পথের মানুষদের একত্রিত করে এ বিষয়ে স্বেচ্ছার ভূমিকা রাখতে হবে।’

এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ফেনীবাসী রাজনৈতিক ও প্রতিবেশি আগ্রাসনের শিকার হয়েছি। বর্তমানে যে সরকার রয়েছে এটি জনগণের সরকার। আমরা ফেনীবাসীর সমস্যা নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা এমনভাবে বলেন, মনে হয় যেন আজই সমাধান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও আমরা কোনো সমাধান পাইনি। ফেনীর নিরাপত্তা ইস্যুতে এ সরকারের কূটনৈতিক কোনো তৎপরতাও আমরা দেখিনি, এটি খুবই দুঃখজনক।’

সম্প্রতি ফেনীর বন্যা নিরাপত্তায় সাত হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পটি যেন কোনোভাবে লুটপাটের কবলে না পড়ে সেদিকে ফেনীর বিশিষ্ট জনদের নজর দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

সাংবাদিক ফারাবী হাফিজ চব্বিশের বন্যায় নিজ হাতে তিনটি বেওয়ারিশ লাশ দাফন ও টানা কয়েকদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফেনীবাসীর জন্য কাজ করার স্মৃতি তুলে ধরেন। এসময় পুরো মিলনায়তন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।

ইঞ্জিনিয়ার মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের প্রতিবেশি ভালো নয়। তারা আমাদের পরিকল্পিতভাবে ডুবিয়েছে, ডুবাতে চায়। তার মধ্যে আবার বিগত সরকারের সময় উন্নয়নের মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে। একারণে উন্নয়নগুলো টেকসই হয়নি। যার কারণে ফেনীবাসীকে বার বার ভুগতে হচ্ছে। আমরা এবার অন্তত এটার সমাধান চাই।’

সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল বলেন, ‘ফেনীর বন্যার পর আমরা একবছর পার করলাম। এ এক বছরে আমরা কোনো টেকসই সমাধান দেখলাম না। অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। ভেবেছিলাম এখন দুর্নীতি হবে না বলে কাজগুলো মানসম্মত হবে। কিন্তু তাদের বানানো বাধ ছয় মাসও টিকলো না। তারা এখন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দেখাচ্ছেন। কিন্তু আমরা এতে আশাবাদী হতে পারছি না। কেননা, কম খরচে বড় যে সমাধানগুলো সম্ভব ছিল তারা সেগুলোর দিকে নজরই দিচ্ছে না। তারা শুধু বাধ বানালে ব্যবসা হয় সেদিকেই ব্যস্ত। দুঃখজনক হলো গত এক বছরে একটা নদী, খাল বা জলাধার উদ্ধার করা হয়নি। কম খরচেই এটা বাস্তবায়ন করে বন্যা ঝুঁকি অন্তত ৪০ শতাংশ কমানো যেত।’

দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, ‘ফেনীর বন্যা ঝুঁকি শুধু ফেনীর সমস্যা নয়। এটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য প্রয়োজন।’

হুমায়ুন পাটোয়ারী বলেন, ‘গত এক বছরে ফেনীবাসী বন্যা মোকাবিলায় অনেক দাবি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো সমাধান পাইনি। এখনও অসংখ্য মানুষের কোনো পুনর্বাসন হয়নি। অসংখ্য ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়েছে। কেউ এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বন্যা নিয়ন্ত্রণে শুধু বাধের আলোচনা হলেও নদী, খাল, জলাধার উদ্ধার করা হয়নি। দাবি বাস্তবায়নে এখন আমাদের আরও শক্ত অবস্থানে যেতে হবে।’

ড. নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘ফেনীর বন্যার বড়, কারণ প্রতিবেশি দেশ ভারতের অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া পানি। আমরা জানি বিগত সরকার ছিল ভারতের দাস একটি সরকার। এজন্য তারা ভারতের অন্যায়ে চুপ থাকতো। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আসা সরকার অন্তত তাদের চোখে চোখ রেখে দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনও বিবাদপূর্ণ বাধটির বিষয়েও তারা কোনো সমাধান করতে পারেনি। আগাম পানির তথ্যও আদায় করে নিতে পারছে না।’

মতবিনিময় সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।

এসএস