দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এসেই চীনা পণ্যে একের পর এক শুল্ক আরোপ শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কয়েক ধাপে চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্কহার পৌঁছায় ১৪৫ শতাংশে। জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে কয়েক দফায় ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। ২০২৪ সালে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার। যা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
এমন অবস্থায় আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় আসতে প্রথম মেয়াদে ৩ মাসের স্থগিতাদেশ দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। যার সময়সীমা ছিল ১২ আগস্ট পর্যন্ত। শেষ মুহূর্তে এসে আবারও শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ ৯০ দিনের জন্য বাড়িয়ে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষায় আছে দেখা যাক কী হয়। তবে চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তারা বিশাল অংকের শুল্ক নিচ্ছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’
সোমবার (১১ আগস্ট) এক যৌথ বিবৃতিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মেয়াদ চলতি বছরের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তবে এ সময়ে চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ৩০ শতাংশ এবং মার্কিন পণ্যে চীনের ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই বাড়তি সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং চীনা বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়া, চীনের বিরল খনিজ, রাশিয়ান তেল ক্রয় এবং উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক চিপ বিক্রিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি ট্রাম্প কিছু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছেন। এতে এএমডি ও এনভিডিয়ার মতো টেক প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা কোম্পানির কাছে নির্দিষ্ট ধরনের চিপ আবারও বিক্রি শুরু করেছে। তবে এর বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের আয়ের ১৫ শতাংশ দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে।
আরও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বলছে, চলমান শুল্ক আরোপের হুমকিতে গেল বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে, চীন থেকে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৫% কম। একই সময়ে চীনের মার্কিন পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২০%।
তবে নতুন করে শুল্ক স্থগিতের খবরে চাঙা ভাব বিরাজ করছে চীনের শেয়ার বাজারে। সাংহাই কম্পোজিটের সূচক ঊর্ধ্বমুখী। স্থিতিশীল রয়েছে হংকংয়ের শেয়ার বাজার। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের প্রধান তিন সূচকই নিম্নমুখী। মার্কিন-চীন শুল্ক ইস্যুতে অনিশ্চয়তায় আছে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার সূচকে এস অ্যান্ড পি ফাইভ হান্ড্রেড কমেছে ০.২৪ শতাংশ, নাসদাক কমেছে ০.২৯ শতাংশ এবং ডাও জোন্স কমেছে ০.৪৪ শতাংশ।
চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক কেবল বিশ্ব অর্থনীতিকে নয়, ক্ষতির মুখে ফেলবে মার্কিন অর্থনীতিকেও। গেল ৭ আগস্ট থেকে বিশ্বের মোট ৬৯টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হওয়া গড় শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশে। যা প্রায় একশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর।
নভেম্বরের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাসের মৌসুম শুরু হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কাজে লাগিয়ে স্বল্প শুল্কহারে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ব্যস্ত চীন। অন্যদিকে, ক্রিসমাস সামনে রেখে মার্কিন খুচরা বিক্রেতারাও পণ্যের মজুত বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।