ইলন মাস্ক-ট্রাম্পের সম্পর্কে তিক্ততা, টেসলার শেয়ারে ধস

ইলন মাস্ক-ট্রাম্পের পুরানো ছবি
বিদেশে এখন , উত্তর আমেরিকা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একসময়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন চরম তিক্ততায় রূপ নিয়েছে। বাজেট ইস্যু নিয়ে দুইজনের সম্পর্ক পৌঁছেছে তলানিতে। ট্রাম্প প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করার পর এখন পাল্টাপাল্টি হুমকি আর পরস্পরকে অপদস্থ করছেন তারা। ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের সকল চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা উচিত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন টেসলা প্রধান। এদিকে দুই শক্তিধর ব্যক্তির বাদানুবাদে একদিনে ১৫ হাজার কোটি ডলার শেয়ার দর হারিয়েছে টেসলা।

‘বিশেষ মানুষের জন্য বিশেষ উপহার’— ডজ প্রধানের পদ ছাড়ার দিন ইলন মাস্কের হাতে স্বর্ণের চাবি তুলে দেয়ার সময় এ কথাই জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ ৫ দিন পর পরিস্থিতি ঠিক উল্টো।

ট্রাম্পের বাজেট ইস্যুতে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক পৌঁছেছে তলানিতে। প্রস্তাবিত বাজেটে কর ছাড় ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবার শঙ্কা প্রকাশ করে পোস্ট করেন ইলন মাস্ক। আর বৃহস্পতিবারই (৫ জুন) মাস্কের সমালোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবগত ছিলেন মাস্ক। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি কর্মসূচিতে ভর্তুকি কমানোর পর থেকেই বাজেট নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ মন্তব্য শুরু করেন তিনি। তাই টেসলা প্রধানের আচরণে হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমার বিষয়ে ভালো মন্তব্য করেছেন। কখনো ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। তবে আমার ধারণা, সামনে এটি হতে যাচ্ছে। আমি ইলনকে নিয়ে খুবই হতাশ। আমি তার অনেক উপকার করেছি।’

প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যে আরও চটে যান মাস্ক। এক্স হ্যান্ডেলে সিরিজ পোস্টে টেসলা সিইও দাবি করেন, প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের দাবি মিথ্যা। তাকে ছাড়া ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রকে মন্দার মুখে ঠেলে দিচ্ছে রিপাবলিকান সরকারের আগ্রাসী শুল্কারোপ। এমনকি ট্রাম্পকে অভিশংসন করা উচিত বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

বিপরীতে ট্রুথ সোশ্যালে ইলন মাস্ককে পাগল বলে সম্বোধন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জানান, প্রস্তাবিত বাজেট পাস না হলে মার্কিনদের কর বাড়বে ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত। এমনকি মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকিও দেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে দুই শক্তিধর ব্যক্তির দ্বন্দ্ব উপভোগ করছেন মার্কিনীরা।

মার্কিনীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘খুবই আনন্দ পাচ্ছি। আশ্চর্য হইনি। বিনোদনের আরেকটি উৎস হিসেবে এটিকে দেখছি।’

আরেকজন বলেন, ‘দুইজনই শক্তিধর ব্যক্তি এবং তাদের অহংবোধও অনেক। এটি সাজানো নাটক কি না বলতে পারছি না।’

এদিকে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের জেরে পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতনের শিকার হয়েছে টেসলা। আজ (শুক্রবার, ৬ জুন) ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটি দর হারিয়েছে ১৫ হাজার কোটি ডলার। অন্যদিকে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার হারিয়ে মাস্কের সম্পদ নেমেছে ৪০ হাজার কোটি ডলারের নিচে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বন্দ্ব অনুমেয় হলেও সবার ধারণা ছাড়িয়েছে এর মাত্রা।

ওয়েববুশ সিকিউরিটিজ ফার্মের প্রধান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড্যান আইভেস বলেন, ‘আজ যা হলো, সেটি খুবই আশ্চর্যের বিষয়। তবে কেউই আশা করেনি ট্রাম্পের প্রতি এতটা আগ্রাসী হবেন মাস্ক। আবার ট্রাম্পও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। সাম্প্রতিক সময়ের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। শঙ্কা রয়েছে এই বিবাদ সামনে আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।’

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান বাদানুবাদে বাতিল হতে পারে স্পেস এক্সের ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সরকারি চুক্তি।

এসএইচ