মার্কিন হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইয়েমেনের জ্বালানি কেন্দ্র

সানায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

ইয়েমেনের জ্বালানি টার্মিনালে ভয়াবহ হামলা মার্কিন বাহিনীর
বিদেশে এখন
0

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইয়েমেনের লোহিত সাগর সংলগ্ন রাস ইসা জ্বালানি কেন্দ্র। এরপরও রাজধানী সানায় আরও কয়েক দফা হামলা করেছে মার্কিন বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী সানায়। এসময় গাজাকে সমর্থনের অঙ্গীকার জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের চরম নিন্দা করে সানায় বিক্ষোভ করেছেন হাজারো ইয়েমেনি। এদিকে, জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনের সরকার আর যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লোহিত সাগরে মোতায়েন রণতরী ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান আর ইউএসএস কার্ল ভিশনে রাখা ড্রোন আর মিসাইলের বহর। এই বহর দিয়ে ইয়েমেনের লোহিত সাগর উপকূলে অবস্থিত রাস ইসা জ্বালানি টার্মিনালে ভয়াবহ হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী।

হুতি নিয়ন্ত্রিত সানায় মার্কিন যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা হয়েছে। জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সানার কয়েকটি স্থানে হামলা হয়েছে। এরমধ্যে একটি এলাকায় পাওয়ার প্ল্যান্ট অবস্থিত। যদিও হুতিরা এসময় মার্কিন এমকিউ নাইন রিপার ড্রোন ভূপাতিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বেহাল দশা হয়েছে ইয়েমেনের জ্বালানি টার্মিনালের। মার্কিন সামরিক বাহিনীর দাবি, এই বন্দরে হুতিদের উপস্থিতি অনেক বেশি। যদিও নিহতদের অনেকেই জ্বালানি কোম্পানিতে কাজ করতো। এই বন্দর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বন্দর শহর হোদেইদাহ। যেখানে ৩০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের মজুদ রয়েছে।

শুক্রবারের এই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে প্রায় ৮০ জনের। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ইয়েমেনে হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় হামলা। এই বিমান হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিক্ষোভ হয় দেশটিতে। সানার সেভেনটি স্কয়ারে ইয়েমেনের পতাকা নিয়ে দেশে হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, 'আমরা গাজাকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেই পরিস্থিতি হোক, গাজাকে একা ছাড়বো না। যুক্তরাষ্ট্রকে এটা বুঝতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যতোই বলুক, সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করেনি, হুতিদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলা বেসামরিক স্থাপনাতেই হয়েছে।'

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেনে সবচেয়ে বড় হামলা হলেও গাজার প্রতি সমর্থন এতোটুকু কমেনি দেশের সাধারণ মানুষের। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিক্ষোভ করেছে হাজারো ইয়েমেনি। তাদের দাবি, ইসরাইলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও এখন তাদের শত্রু হয়ে গেছে।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে। আমেরিকার সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য এটা। অবরুদ্ধ গাজায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটছে। লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছি গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে। আমাদের অপমান করলে, ভয় দেখালে বা দুর্বল ভাবলে চলবে না।'

এদিকে লোহিত সাগরে ফ্রান্সের ফ্রিগেট একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। দাবি করা হয়েছে, এটি ইয়েমেন থেকে ছোড়া হয়েছে। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিদের হামলা বন্ধেই ইয়েমেনে এতো হামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র। গেলো প্রায় এক দশক ধরে ইয়েমেনের অনেকাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র হুতি যোদ্ধারা।

এরমধ্যে গণমাধ্যম আশার্ক আল আওসাতের প্রতিবেদন বলছে, সশস্ত্র হুতি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অপারেশনের পরিকল্পনা করছে ইয়েমেনের সরকার। এতে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র। লন্ডনভিত্তিক সৌদি আরবের এই পত্রিকা বলছে, অভিযান আতঙ্কে হোদেইদাহ বন্দরসহ আরও ঘনবসতির এলাকাগুলোতে মাইন পুঁতে রেখেছে হুতি বিদ্রোহীরা।

সেজু